Header Ads

Header ADS

জুতার ইবাদত: ইমাম আবু হানিফার নামে অপবাদ


প্রায়শই আমরা দেখতে পাই, ইমাম আবূ হানীফাহ রহ. এর অন্ধ বিদ্বেষীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ রটিয়ে বেড়ায়। তেমনি একটি অপবাদ হচ্ছে, তিনি নাকি বলেছিলেন, কেউ যদি আল্লাহর নৈকট লাভের উদ্দেশ্যে জুতার ইবাদত করে তবে এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তুআদৌ কি তিনি এমন কথা বলেছিলেন ? আজ আমরা তার নামে প্রচারিত এই বক্তব্যের বাস্তবতা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
أَخْبَرَنَا مُحَمَّد بن الحُسَيْن بن الفضل القَطَّان، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْد الله بن جَعْفَر بن درستويه، قَالَ: حَدَّثَنَا يَعْقُوب بن سُفْيَان، قَالَ: حَدَّثَنِي عَليّ بن عُثْمَان بن نفيل، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو مُسْهِر، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بن حمزة، وَسَعِيد يسمع، أَنَّ أَبَا حنيفة، قَالَ: لو أَنَّ رجلا عَبْد هذه النعل يتقرب بها إلى الله، لم أر بذلك بأسا، فَقَالَ سَعِيد: هَذَا الكفر صراحا
অর্থ: ইয়াহইয়া ইবনে হামজা সাঈদ ইবনে আব্দুল আজিজ এর সামনে এই কথা বর্ণনা করেছেন যে, আবূ হানীফাহ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার নৈকট্যর উদ্দেশ্যে এই জুতার ইবাদত করে, তবে আমি এর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখি না । তখন সাঈদ ইবনে আব্দুল আজিজ বললেন, এটা তো সরাসরি কুফর। [আল-মা’রিফাহ ওয়াত তারীখ: ২/৭৮৪, তারীখে বাগদাদ (বাশশার): ১৫/৫০২] ১. এটি এমন একটি হাস্যকর ও অযৌক্তিক ঘটনা যে, সুবিশাল ইতিহাসে এ ঘটনার সাক্ষী কেবল একজনই! এ একজন লোক ছাড়া এ ঘটনার দ্বিতীয় কোন সাক্ষী নেই। আর ইসলামী শরীয়তে একজনের সাক্ষ্য যথেষ্ট নয়, বিশেষ করে কুফরির সাক্ষ্য তো নয়ই। যাইহোক, এ কথা বলার দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলো, ইমাম আবূ হানীফাহ থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য/আকিদার বর্ণনাকারী মাত্র একজন ব্যক্তি! আর তিনি হলেন ইমাম আবূ হানীফাহ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে শামে বসবাসকারী ইয়াহইয়া বিন হামজা। এই ইয়াহইয়া বিন হামজা ছাড়া ইমাম আবূ হানীফাহ থেকে এমন কথা আর না কেউ শুনেছেন, না কেউ বর্ণনা করেছেন। এক কথায়, এটি ইমাম আবূ হানীফাহ'র নামে এমন একটি ডাহা মিথ্যা ও জঘন্য অপবাদ- যা ইয়াহিয়া বিন হামজা ছাড়া আর কেউই দেয়নি। এখানে আরো একটি বড় প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়, তা হলো ইয়াহইয়া বিন হামজা ইমাম আবু হানিফার না ছাত্র, না সহচর, না তার এলাকায় বসবাস করতেন- বরং তিনি ইমাম আবু হানিফা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে শামে বসবাস করতেন। তাহলে তিনি এত দূরে থেকে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি কিভাবে পেলেন যা আর কেউই পেল না, এমনকি তার সার্বক্ষণিক সাথী-সঙ্গীরাও না। অথচ তাঁর আশেপাশে হাজার হাজার ছাত্র ও মানুষের আনাগোনা ছিল। তাহলে যে কথা ইয়াহইয়া বিন হামজা ছাড়া আর কেউ শুনেনি, এমন একটি বিচ্ছিন্ন ও একক বক্তব্য কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? ২. তিনি এত বড় কুফরিতে নিমজ্জিত অথচ এই কুফুরীর বিষয়টি বিন্দুমাত্র প্রচারই পাইনি। অথচ ইমাম আবু হানিফা ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, তাঁর একটি কথা জবান থেকে বেরোনোমাত্র মুহুর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো। তো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা কেউ ভুলেও কেন বর্ণনা করলো না, কেনই বা এ নিয়ে সামান্যতম মাতামাতিও হলো না। আর ইতিহাসের কিতাবাদীতে এর ন্যূনতম আলোচনাও বা কেন নেই। যদি তার এমন কথা বলাটা সত্য হবে তাহলে চারদিকে ছড়িয়ে না পড়াটা কিভাবে সম্ভব! যেখানে তথাকথিত কুফর “আনাল হক” এর দায়ে হুসাইন বিন মানসুর হাল্লাজ এর মৃত্যুদণ্ড হয় সেখানে ইমাম আবু হানিফার মত আলোচিত ব্যক্তি কিভাবে বেঁচে যান কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই!
তিনি যদি সত্যিই এমন কথা বলে থাকতেন নিশ্চয়ই এতে তৎকালীন যুগে বিশাল বড় বিতর্ক তৈরি হতো এবং এ বিষয়ে ইতিহাসের কিতাবাদী ভরপুর আলোচনা থাকতো। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, ইতিহাসের কিতাবাদীতে এর কোন আলোচনাই নেই। একমাত্র তারীখে বাগদাদ এবং প্রায় অপরিচিত একটি কিতাবেই ইয়াহিয়া বিন হামজার উক্ত কথাটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ৩. সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার নামে প্রচারিত এই ঘটনাটিকে কোনো একজন গ্রহণযোগ্য আলেম/মুহাদ্দিস আমলেই নেননি। না এ ব্যাপারে তারা মুখ খুলেছেন, আর না এ ব্যাপারে তারা দু’কলম লিখেছেন। অথচ কুফরের বিরুদ্ধে তাদের কলম শত শত পৃষ্ঠা পাড়ি দিতো অনায়াসেই। এ ঘটনা যদি বাস্তবসম্মত হতো তাহলে নিশ্চয়ই আলেম/মুহাদ্দিসগণ ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে কুফুরীর হুকুম লাগাতে দ্বিধাবোধ করতেন না। যদি তিনি সত্যিই তা বলে থাকবেন তাহলে নিশ্চয়ই যুগে যুগে বড় বড় আলেমগণ এ ব্যাপারে চুপ থাকতেন না। অথচ দেখা যায় (তাদের কথা অনুযায়ী) তিনি এত বড় কুফরীতে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি; উল্টো সবাই তাকে ইমাম ইমাম বলে মাথায় তুলে রেখেছিলেন। প্রত্যেক যুগের এমন কোন বড় ইমাম নেই যিনি ইমাম আবু হানিফার প্রশংসা করেননি! জামানার এমন কোন ফকিহ নেই যিনি ইমাম আবু হানিফার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেননি! হানাফি ফিকহ ছাড়াও অন্যান্য মাযহাবের ফিকহের কিতাবাদীও ইমাম আবু হানিফার কথাবার্তায় ভরপুর! ইমাম ইবনে তাইমিয়ার কিতাবাদীতেও ইমাম আবু হানিফার বক্তব্যের ছড়াছড়ি। হাফেজ যাহাবী ইমাম আবু হানিফার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি স্বতন্ত্রভাবে ইমাম আবু হানিফা ও তার ছাত্রদের জীবনীও সংকলন করেন। ইমাম আবু হানিফার প্রশংসায নিন্দুকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দিবস প্রমাণে দলীলের প্রয়োজন নেই। যে ব্যক্তি দিবস প্রমাণে দলিল খুঁজে সে মূর্খ বা তার কাছে সঠিক বলতে কিছুই নেই!অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টিতে ইমাম আবু হানিফার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য কোন দলিলের প্রয়োজন নেই। তিনি দিবসের মতো নিজেই নিজের দলিল! [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা: ৬/৪০৩]
ইবনে হাজার তো বলেই দিয়েছেন, ইমাম আবু হানিফা সমালোচনার সেতু পার করে ফেলেছেন, অতএব তার সমালোচনা করলে তার ব্যক্তিত্বে কোন প্রভাব পড়বে না। [আল-জাওহার ওয়াদ দুরার ফী তারজামাতি ইবনু হাজার: ২/৯৪৭; তাহযীবুত তাহযীব: ৫/৬৩১] হাফেজ মিযযী তো তার সমালোচনা উল্লেখ না করেই তৃপ্তি পান। এ ব্যাপারে হাফেজ যাহাবী বলেন, আমার শায়েখ ইমাম আবু হানিফার সমালোচনা উল্লেখ না করে কতই না উত্তম কাজ করেছেন! [তাযহীবু তাহযীবিল কামাল: ৯/২২৫] হাফিয ইবনু কাছীর ও জালাল উদ্দিন সুয়ূতী তো তাঁর সমালোচনার পরিবর্তে তাঁকে হাফিজুল হাদিস হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন। তাই তো তাঁরা তাঁদের ‘হাফিজুল হাদিস রাবীদের জীবনী গ্রন্থে’ তাঁর জীবনী এনে নিজেদের গ্রন্থগুলোকে অলংকৃত করেছেন। উপর্যুক্ত ইমামগণ ছাড়াও পরবর্তী কালের আহলে সুন্নাহ’র ইমামগণও তাঁর প্রশংসা ছাড়া কিছু উল্লেখই করেননি। এ ব্যাপারে সালাফী শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন,
.ولما ترجم الذهبي وابن كثير وغيرهما من مؤرخي أهل السنة للإمام أبي حنيفة رحمه الله لم يعرجوا على شيء مما يوجب القدح فيه ، وهذا من تمام العلم والورع ، وهو الواجب علينا تجاه علمائنا رحمهم الله تعالى ، وهو أقل ما يبذل رعايةً لحقهم وحرمتهم .
অর্থ: “হাফিয যাহাবী, হাফিয ইবনু কাছীরসহ পরবর্তী কালের আহলুস সুন্নাহ’র ইমামগণ ইমাম আবূ হানীফাহ রাহিমাহুল্লাহ এর জীবনী বর্ণনায় এমন কোনো কথা আলোচনা করেননি যা তাঁর শানকে ছোট করে। আর এটাই হচ্ছে পূর্ণ ইলম এবং তাকওয়ার পরিচায়ক। এটি আমাদের ইমামদের হক আদায়ে আমাদের জন্য ওয়াজিব। আর এটাই হবে তাঁদের প্রতি সম্মান জানানোর সর্বনিম্ন পন্থা। আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি রহম করুন।” সূত্র: তো আপনি কি মনে করেন উপরের ইমামগণ একজন কাফেরের প্রশংসায় এতটা মুখরিত! বা কমপক্ষে একজন কাফের- যাকে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী অনুসরণ করা আসছে তার কুফরি সম্পর্কে নীরব ভূমিকা পালন করেছিলেন? ৪. বিদ্বেষীদের কথা অনুযায়ী যদি কিছুক্ষণের জন্য এ ঘটনাকে সত্য ধরেও নিই যে তিনি আসলেই এমন কথা বলেছেন, তাহলে ইমাম আবু হানিফার কাফের হওয়া নিশ্চিত! অথচ ইতিহাসের একজন ইমামও তাকে কাফের আখ্যায়িত করেননি! কিন্তু কেন? তারা কি এই ঘটনা জানতেন না! যদি বলেন, জানতো! তাহলেও রক্ষা নেই! কারণ, জেনেও তারা এই ঘটনা অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করেছেন বা জেনেও ইমাম আবু হানিফার কুফরকে সমর্থন করে (চুপ থেকে) নিজেরাও কুফরীতে লিপ্ত হয়েছেন। আর যদি বলেন, তারা ইমাম আবু হানিফার এর বিষয়টি জানতো না, তাহলেও রক্ষা নেই! কারণ, এটি এমন একটি বানোয়াট বর্ণনা- যে বর্ণনার ব্যাপারে বড় বড় ইমামগণ পর্যন্ত ওয়াকিব (জ্ঞাত) নন, অর্থাৎ এটি একটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও মিথ্যা অপবাদ- যার আদৌ কোন সত্যতা নেই। মূলত, ইমামগণের কাছে এই বর্ণনার বিন্দুমাত্র গ্রহণযোগ্যতাও ছিল না। আর এ কারণেই তারা এটি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনবোধ করেননি এবং এই বর্ণনার কারণে তাকেও কাফের আখ্যায়িত করেননি। বরং এ বর্ণনার আলোকে তাকে দোষারোপ করলে উল্টো তারা ‘বুহতান’ (অপবাদ)-এ লিপ্ত হবেন বলে আশঙ্কা করতেন- যা গীবতের চেয়ে মারাত্মক গুনাহের কাজ! এ কারণেই এই ভিত্তিহীন বর্ণনার আলোকে ইমাম আবু হানিফাকে অপবাদ দেওয়ার ব্যাপারে তারা নীরব ছিলেন। বা তারা এই মিথ্যা বর্ণনা সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞাতই ছিলেন না, কারণ, বিষয়টি গ্রহণযোগ্য কোনো রাবী বর্ণনাই করেনি, বরং এমন একজন রাবি বর্ণনা করেছেন যার কথা কেউ কানেই তুলেনি। যাইহোক, যেহেতু এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে বড় বড় ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন আলোচনা-সমালোচনা কিছুই নেই। তার মানে তারা উক্ত বর্ণনা গ্রহণই করেননি! যদি তাদের দৃষ্টিতে উক্ত ঘটনা সঠিক হতো তাহলে নিশ্চয়ই এ ঘটনার ভিত্তিতে তারা তাকে কাফের আখ্যায়িত করতেন বা কমপক্ষে বিতর্ক সৃষ্টি করতেন। কিন্তু যেহেতু তারা এর কোনোটাই করেননি- এর থেকে প্রমাণিত হয় এ ঘটনার কোন ভিত্তি নেই।
৫. এই ঘটনার সনদই সহীহ নয় কারণ, ইয়াহিয়া বিন হামজা ইমাম আবু হানিফার সাক্ষাৎ পেয়েছেন বলে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। ইয়াহিয়া বিন হামজা ছিলেন শামে বসবাসকারী আর ইমাম আবু হানিফা হলেন কুফায় বসবাসকারী। না ইমাম আবু হানিফা কখনো শামে গিয়েছেন আর না ইয়াহইয়া ইবনে হামজা কখনো কুফায় এসেছেন। আর তার বর্ণনার ধরণ থেকে বোঝা যায়, এটি তিনি নিজ কানেও শুনেননি। যদি তিনি নিজের কানে শুনতেন তাহলে এমনটা বলার কথা ছিল যে, ‘আমি ইমাম আবু হানিফাকে বলতে শুনেছি’ বা ‘তিনি অমুকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন…’। অথচ তিনি সে সব না বলে সরাসরি বলেছেন , قال أبو حنيفة (ইমাম আবু হানিফা বলেছেন…)। কিন্তু তিনি কখন বলেছেন, কেন বলেছেন, কোন প্রেক্ষাপটে বলেছেন, কোথায় বলেছেন এবং কাকে বলেছেন- এসবের কোনো কিছুই জানা যায় না। অথচ এই সমস্ত বিষয় ছাড়া কেবল উপর্যুক্ত কথাটি বেমানান। নাকি বিদ্বেষীরা বলতে চায় যে, তিনি হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে শাম থেকে কুফা এলেন আর অমনি ইমাম আবু হানিফা কোন ধরনের প্রেক্ষাপট ছাড়াই তাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলে দিলেন যে, হে ইয়াহইয়া বিন হামজা তুমি শোনো, কেউ যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে জুতার ইবাদত করে তবে তাতে আমি কোন সমস্যা দেখি না! ব্যাপারটা হাস্যকর নয় কি? আর তিনি যে ঢঙে বলেছেন, অর্থাৎ ‘ইমাম আবু হানিফা এমন এমন বলেছেন …‘। মনে হচ্ছে তিনি ইমাম আবু হানিফের খুব কাছের ব্যক্তি অথবা ইমাম আবু হানিফা থেকে এটি খুবই প্রসিদ্ধ একটি কথা; এ কারণে তিনি কোন প্রেক্ষাপট উল্লেখ করেননি। অথচ এত বড় প্রসিদ্ধ কথা যে ইয়াহইয়া বিন হামজা ছাড়া আর কেউই বর্ণনাই করেনি!আর তিনিও ইমাম আবু হানিফার এত কাছের ব্যক্তি যে ইমাম আবু হানিফার সাথে তার সাক্ষাৎই প্রমাণিত নয়। অতএব এই সনদটি সহীহ নয় বরং মুনকাতি’ তথা সূত্রবিচ্ছিন্ন! এই বর্ণনার সনদ যে সহীহ নয় এ ব্যাপারে খোদ জনৈক আহলে হাদিস আলেম এর একটি বক্তব্য উদ্ধৃতি করছি। তিনি এই বর্ণনার সনদ সম্পর্কে লিখেছেন,

بہت سے علماء نے اس کی سند کو صحیح قرار دیا ہے، لیکن اصل میں ایسا نہیں ہے۔
ایک اہم بات جو شاید ان تمام علماء نے اپنی تحقیق میں نظر انداز کی ہے وہ یہ کہ اگرچہ اس کے تمام رجال ثقہ ہیں اور سند بظاہر صحیح ہے لیکن اس میں انقطاع موجود ہے۔

یحیی بن حمزہ بن واقد الدمشقی الشامی اور امام ابو حنیفہ کے درمیان سند منقطع ہے۔
یحیی بن حمزہ دمشق شام کے رہنے والے ہیں جبکہ امام ابو حنیفہ کوفی ہیں۔ اور نہ تو امام ابو حنیفہ کبھی شام آئے اور نہ یحیی بن حمزہ کبھی کوفہ گئے، تو یہ بات انہوں نے کہاں سے سنی!؟
بلکہ یحیی بن حمزہ کے اساتذہ کی فہرست نکال کر دیکھیں، ان کے تمام شیوخ شام یا دمشق یا حجاز کے ہیں اور سوائے سفیان الثوری کے کوفہ کا ایک بھی شخص ان کے شیوخ میں شامل نہیں ہے۔ اب جس شخص نے کوفہ کہ ایک بھی شخص سے کچھ بھی نہ سنا ہو، وہ صرف امام ابو حنیفہ سے یہ ایک جملہ سننے کے لئے ہزاروں میل کا سفر طے کر کے کوفہ کیوں جائے اور اگر جائے تو ایک بھی کوفی سے روایت نہ کرے!؟؟

اللہ ہمیں انصاف پسندی کی توفیق دے اور مذہبی تعصب سے بچائے! آمین

অর্থ: “বহুত (আহলে হাদীস) আলেম এই ঘটনার সনদকে সহীহ বলেছেন, কিন্তু বাস্তবতা এমন নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য- যা সম্ভবত ঐ সকল আলেমরাও নিজেদের তাহকীকের ক্ষেত্রে খেয়াল করেছেন তা হল এই যে, যদিও এই ঘটনার সকল রাবি গ্রহণযোগ্য এবং সনদ বাহ্যিকভাবে সহীহ কিন্তু এ সনদের মধ্যে ইনকিতা’ তথা সূত্রবিচ্ছিন্নতা রয়েছে। কারণ, ইয়াহইয়া বিন হামজা ইমাম আবু হানিফার সাক্ষাৎ লাভ করেননি। ইয়াহিয়া বিন হামজা শামে বসবাসকারী আর ইমাম আবু হানিফা হলেন কুফায় বসবাসকারী। না ইমাম আবু হানিফা কখনো শামে গিয়েছেন আর না ইয়াহইয়া ইবনে হামজা কখনো কুফায় এসেছেন। তাহলে এই ঘটনা তিনি কার থেকে শুনলেন? বরং ইয়াহইয়া ইবনে হামজার ওস্তাদগণের তালিকা করলেও দেখা যাবে তার সমস্ত শায়েখ শাম, দামেস্ক অথবা হিজাজের। সুফিয়ান সাওরি ব্যতীত তার কোন কূফী ওস্তাদ নেই। এখন যে ব্যক্তি কুফার একজন লোক থেকেও কিছুই শুনে নাই সে কেবল ইমাম আবু হানিফা থেকে এই এক বাক্য শোনার জন্য হাজার মাইল অতিক্রম করে কূফায় চলে এসেছে? আর যদি সত্যি সত্যি কুফায় গিয়েও থাকবে তাহলে তাদের থেকে তার কোন বর্ণনা নেই কেন? আল্লাহ আমাদের ইনসাফপছন্দীর তাওফীক দান করুন এবং মাযহাবীবিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।” একটি আপত্তি ও জবাব উপরিউক্ত আহলে হাদিস ভাইয়ের বক্তব্যের জবাবে আরেকজন আহলে হাদিস ভাই বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ হাফেয জুবায়ের আলী যাঈ এবং রফিক তাহের হাফিজাহুল্লাহ (লা-মাযহাবী আলেম) এর নিকট দুরস্ত আছে। আর এ কথা সুস্পষ্ট যে আলোচ্য আলেমদ্বয়ের অবস্থান ইলম এবং তাহকীকের ময়দানে আপনার থেকে অনেক উপরে। আরো বিস্তারিত তথ্য তো রফিক তাহের এবং কেফায়েতুল্লাহ ভ্রাতাগণই দিতে পারেন।
কিন্তু মজার বিষয় হলো ভাইয়ের উক্ত কথার দ্বারা লা-মাযহাবী ভ্রাতাগণ নিজেরাই আটকে যাচ্ছেন!কারণ, তারা নিজেরাও এটা মানেন যে, ছোটদের তুলনায় ইলম ও তাহকীকের ময়দানে বড়রাই অগ্রগণ্য! তাদের কথার বিপরীতে ছোটদের/পরবর্তীদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে আমরাও বলব; আমরা বলব কেন বরং এটাই বাস্তবতা যে জুবায়ের আলী যাই এবং রফিক তাহেরের তুলনায় পূর্ববর্তী ইমামগণের অবস্থান ইলম-আমল-তাকওয়া ও তাহকীকের ময়দানে বহুগুণে এগিয়ে! আর পূর্ববর্তী ইমামগণের কোনো একজন ইমামও এ বর্ণনার সনদকে সহীহ বলেননি! বরং তারা এই বর্ণনাকে আলোচনার বিষয়বস্তুই বানাননি। এর থেকে বোঝা যায় পূর্ববর্তী ইলম-আমল ও তাকওয়াবান ইমামগণ উম্মাহের খেদমত ও দ্বীন প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তারা বেহুদা কাজে মনোযোগ দিতেন না! অথচ এ যুগের জুবায়ের আলী যাঈ ও রফিক তাহেররা কতটা অকর্মা যে উম্মাহের খেদমত ও দ্বীন প্রচার বাদ দিয়ে উল্টো উম্মাহের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিবাদ সৃষ্টি ও যতসব উদ্ভট, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বর্ণনার সনদ সহীহ প্রমাণ করার পেছনে সময় ব্যয় করে!শত আফসোস এদের জন্য! এখানে একটি কথা না বললেই নয়, তা হলো, লা-মাযহাবীরা যদি হানাফী মাযহাবের বিরুদ্ধে সামান্য পায়খানাও পায় সেটাও তারা বিরিয়ানি মনে করে খায়। এটা বিচার করে না যে, না, এটা বিরিয়ানি নয় বরং গু। শুনতে খারাপ লাগলেও বাস্তবতা এমনই। তারা হানাফী মাযহাবের বিরুদ্ধে যেটাই পায় সেটাই গিলে নেয়! সনদ যতই সমস্যাযুক্ত হোক তাদের কাছে সমস্যার মনে হয় না; বরং তারা যেভাবেই পারুক এটাকে সহীহ প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা করে! কিন্তু তারা এটা বুঝে না যে ‘গু’কে হাজারো ময়-মসলা দিয়ে তেলে ভাজলেও সেটা বিরিয়ানি হয় না, বরং গু গু-ই থাকে। ইয়াহইয়া বিন হামজা কাদেরী আকীদাহ লালনকারী ইয়াহইয়া বিন হামজাকে রাসুলের হাদিসের ক্ষেত্রে সত্যবাদী বলা হলেও মূলত তিনি একজন কাদেরী আকীদার লোক ছিলেন। আর উসূল হচ্ছে, বাতিল আকীদার লোকদের কথা সুন্নাহর ইমামদের বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর ব্যাপারে বিভিন্ন কিতাবাদীতে এসেছে-
حمزة كان قدريا
অর্থাৎ, ইয়াহইয়া বিন হামজা কাদেরী আকীদাহ’র ছিলেন। দেখুন, তারিখে দিমাশক লি-ইবনে আসাকির; ৬৪/১৩০; আল-কাশিফ লিযযাহাবী: ২/৩২৩ কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, তিনি তো সত্যবাদী তাহলে তার কাদেরী হওয়াতে সমস্যা কী? এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে অনেক রাবি ছিলেন রাসুল হাদিসের ক্ষেত্রে সত্যবাদী তো বটে কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী; যেমন ইমাম আবু দাউদ এর ছেলে। ইমাম আবু দাউদ নিজের ছেলের ব্যাপারে বলেছেন যে,
ابني عبد الله كذاب
অর্থাৎ, আমার ছেলে আব্দুল্লাহ মিথ্যাবাদী। সিয়ারু আ’লামিন নুবালা: ১৩/২২৮ তো ইমাম যাহাবী একথার ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে,
كذاب في غير الحديث
অর্থাৎ, (তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী নন বরং) হাদিস ব্যতীত অন্যান্য সাধারণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী। [তারীখুল ইসলাম লিযযাহাবী ৭/৩১০] তাহলে এর থেকে বোঝা গেল, সত্যবাদী দুই প্রকার। কেউ সর্বক্ষেত্রে সত্যবাদী আর কেউ রাসূলের হাদিসের ক্ষেত্রে তো সত্যবাদী বটে কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী বা গাফিল হতে পারেন। তো এ রাবীর ব্যাপারেও আমাদের একই কথা, তিনি রাসূলের হাদিসের ক্ষেত্রে সত্যবাদী হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়তো তিনি পরিপূর্ণ সত্যবাদী ছিলেন না। আর শেষ কথা হলো, আমরা ঠেলেঠুলে যদি এই বর্ণনার সনদকে সহীহ ধরেও নিই, তবুও এতে কিছু যায় আসে না এবং আবু হানিফার নামে এমন কথা প্রমাণিত হয় না। কারণ, সনদ সহীহ হলেই যদি বক্তব্যও সহীহ হতো তাহলে আপনি সকল শায (বিরল) হাদিস মানতে বাধ্য। কারণ প্রত্যেকটি শায হাদিসের সনদ সহীহ।
৬. এই বর্ণনা সম্পর্কে উপরিউক্ত জনৈক আহলে হাদীস খুবই সুন্দর জবাব দিয়েছেন। নিচে তার জবাবটি হুবহু তুলে ধরা হলো। তার কাছে একটি প্রশ্ন এসেছিল এমন- বাকী অংশ পড়তে ক্লিক করুন...। লুবাব হাসান সাফওয়ান

কোন মন্তব্য নেই

mattjeacock থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.