হানাফী ফিকহে মু'তাযিলী উসুল: মিথ্যা অভিযোগের জবাব
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. মূলত কী বলেছেন দেখুন
প্রিয় পাঠক, এই লিংকে দেওয়া স্ক্রিনশটে যা দেখতে পাচ্ছেন, এর সম্পূর্ণটাই জালিয়াতি এবং ভুল অনুবাদ। এমনকি যে উর্দু ইবারত দেওয়া হয়েছে সেটাও জালিয়াতিপূর্ণ এবং ভুলে ভরা। আর উর্দু ইবারতের যে অনুবাদ করা হয়েছে সেটাও ভুল। তো যে লোক সাধারণ উর্দু ইবারতের সঠিক অনুবাদ করতে পারে না সে ইমামগণের কথা কীইবা বুঝবে!
যাইহোক, আমি এসব জালিয়াতি উন্মোচন করে “হানাফী ফিকহে মু'তাযিলী উসুল: মিথ্যা অভিযোগের জবাব” নামে বিস্তারিতভাবে একটি পুস্তিকা রচনা করেছি। আগ্রহীগণ পড়ে নিতে পারেন। আমি এখানে অতি সংক্ষিপ্তভাবে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো।
📗 শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. মূলত কী বলেছেন
তিনি প্রথমে কথিত উসূলটি উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি নিজেই হানাফীদেরকে এমন উসুল থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন। এবং এই উসূলটি যে হানাফীদের উসূল নয়, বরং হানাফীদের উসূল এর বিপরীত- তিনি তাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন-
قَول المُحَقِّقين فِي مَسْألَة لا يجب العَمَل بِحَدِيث من اشْتهر بالضبط والعَدالَة دون الفِقْه إذا انسد باب الرَّأْي كَحَدِيث المُصراة أن هَذا مَذْهَب عِيسى بن إبان، واخْتارَهُ كثير من المُتَأخِّرين، وذهب الكَرْخِي وتَبعهُ الكثير من العلماء إلى عدم اشْتِراط فقه الرّاوِي لتقدم الخَبَر على القياس، قالُوا: لم ينْقل هَذا القَوْل عَن أصْحابنا، بل المَنقُول عَنْهُم أن خبر الواحِد مقدم على القياس، ألا ترى أنهم عمِلُوا بِخَبَر أبي هُرَيْرَة فِي الصّائِم إذا أكل أو شرب ناسِيا، وإن كانَ مُخالفا للْقِياس حَتّى قالَ أبُو حنيفَة ﵀: لَوْلا الرِّوايَة لَقلت بِالقِياسِ.
(উসূল) “এমন রাবী যিনি যবত এবং আদালতের দিক থেকে প্রসিদ্ধ কিন্তু ফকীহ নন: তাঁর হাদীসের ওপর আমল করা ওয়াজিব নয়; যখন হাদীসটির কারণে রায়ের দরজা বন্ধ হয়।” যেমন مصراة এর হাদীস। এই উসূল সম্পর্কে মুহাকিকদের বক্তব্য হচ্ছে, নিশ্চয়ই এটি হচ্ছে, ঈসা ইবনে আবান (মু'তাযিলীর) মাযহাব/উসূল। পরবর্তীকালের অনেক আলেমও এটাকে গ্রহণ করেছেন। (কিন্তু বিশিষ্ট হানাফী) ইমাম কারখী রহ. ও তাঁর অনুসরণে বহু হানাফী আলেমের মাযহাব হলো এর বিপরীত; অর্থাৎ হাদিস গ্রহণের জন্য রাবীর ফকীহ হওয়াটা শর্ত নয়। কারণ, হাদীস সর্বদা কেয়াসের ওপর প্রাধান্য পাবে। তাঁরা এও বলেন, আমাদের সাথীদের থেকেও এমন উসূল বর্ণিত হয়নি; বরং তাদের থেকে এর উল্টো বর্ণিত হয়েছে- তাঁরা (পূর্ববর্তী হানাফী ওলামায়ে কেরামগণ) বলেছেন, ‘খবর ওয়াহেদ কিয়াসের উপর প্রাধান্য পাবে’। তোমরা কি দেখো না, তাঁরা (হানাফী ফকীহগণ) আবু হুরায়রা (রহঃ)-এর সেই হাদীসের ওপর আমল করেছেন যাতে বলা হয়েছে যে, ভুলে কেউ খানাপিনা করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। অথচ এ ব্যাপারটি কেয়াসের পরিপন্থী। এমনকি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর বক্তব্য হচ্ছে, যদি হাদীস না হতো তাহলে কেয়াসের ভিত্তিতে আমি রোযা ভঙ্গ হবার বিধান দিতাম। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ: ১/২৭৩]
প্রিয় পাঠক, দেখলেন তো! শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. মূলত কী বলেছে আর অভিশপ্ত গণমুকাল্লিদরা কী বানিয়েছে! ভাবতেও অবাক লাগে, গণমুকাল্লিদেরা কীভাবে শিংহকে বেড়াল দেখানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে!
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, উক্ত উসূল আদৌ হানাফীদের উসুল নয়। বরং তিনি হানাফীদেরকে এমন উসুল থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন। তিনি নিজেই পূর্ববর্তী ও সমকালীন হানাফী ইমামগণের বক্তব্য ও আমলের আলোকে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে এমন উসূল হানাফীদের নয়। বরং হানাফীদের উসূল এর বিপরীত। আর তা হলো হাদীস সর্বদা কিয়াসের উপর প্রাধান্য পাবে।
📒 আরেকটি অভিযোগের সংক্ষিপ্ত জবাব
তিনি তার পোস্টে আরো দাবি করেছেন, আমরা সবাই জানি যে, হানাফী ফুক্বাহারা সাইয়্যেদুনা আবূ হুরায়রা এবং আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে ফক্বীহ মনে করে না। হানাফীদের ফতোয়ার বিপরীতে তাদের হাদীস চলে আসলে হাদীস কবুল করা হবে না, যা তাদের বিখ্যাত উসূলের কিতাব উসূলে শাশীতে এসেছে।
📗 জবাব
রেফারেন্স ছাড়া কোনো কথার বিন্দুমাত্র দাম নেই। যেহেতু অভিযোগকারী উক্ত দাবির পক্ষে উলূসুশ শাশী থেকে কোনো রেফারেন্স উল্লেখ করতে পারেনি, এর থেকেই বোঝা যায় তিনি জালিয়াতি করেছেন। সেহেতু আপতত আমরা এর বিস্তারিত জবাব দিচ্ছি না। (পরবর্তীতে দেবো)
বাকি থাকলো, কোনো কোনো সাহাবীকে ফকীহ না মনে করা। এর জবাব হলো, সাহাবী হতে হলে তাঁকে ফকীহ হতে হবে কিংবা ফকীহ হওয়া ছাড়া সাহাবী হওয়া যায় না বা যেহেতু তিনি সাহাবী সেহেতু তিনি ফকীহ- এমন কোনো কথা নেই। কারণ সাহাবী হওয়ার সাথে ফকীহ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই! অনেক সাহাবী ফকীহ না হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাহাবী। অনেক স্বল্প-জ্ঞান-সম্পন্ন ভাগ্যবানরাও সাহাবী। অনেক সাহাবী ছিলেন গ্রাম্য; ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান ছাড়া তাঁরা কিছুই জানতেন না। এখন কি বিরুদ্ধবাদীরা সাহাবী হওয়ার কারণে তাঁদের সবাইকেই ফকীহ বলবে?
তারা কি বলতে চায় যে, ফকীহ না হলে কি তাঁদের সাহাবিত্ব ছুটে যাবে? বা তাঁদেরকে ফকীহ না বলাটা সাহাবীদের শানে বেয়াদবি? যদি বেয়াদবি হয় তাহলে তারা যে অন্যান্য লক্ষ লক্ষ সাহাবীদেরকে ফকীহ বলে না, তা কেন বেয়াদবি নয়?
দ্বিতীয়তঃ মৌলিকভাবে হানাফী ওলামায়ে কেরাম কখনোই নিজেদের রায়ের বিপরীতে কোনো সাহাবীর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করেন না। যেমনটা উপরেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পরিশেষে গণমুকাল্লিদদের কাছে একটি প্রশ্ন, তারা দুই লাইন উল্লেখ করে পাঁচ লাইন গোপন করে আর কতদিন চলবে! এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
[অতি সংক্ষিপ্তভাবে জবাব দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জবাব জানতে পড়ুন “হানাফী ফিকহে মু'তাযিলী উসুল: মিথ্যা অভিযোগের জবাব”। পিডিএফ নিতে পিন পোস্টে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে মেসেজ করুন]
লুবাব হাসান সাফওয়ান
দারুন ভাবে জালিয়াতি ধরেছেন
উত্তরমুছুনঅসাধারণ উপস্থাপন, ধন্যবাদ মহোদয় শ্রদ্ধা জানবেন 🙏
উত্তরমুছুনজাযাকাল্লাহ
উত্তরমুছুনজাযাকাল্লাহ
উত্তরমুছুনজাজাকাল্লাহ, অনেক চমৎকার দলিল ভিত্তিক উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অসংখ্য ধন্যবাদ,জাজাকুল্লাহ, আল্লাহ আপনার ইলেম আমলের মধ্যে বরকত দান করুক আমীন
উত্তরমুছুন