কুরআনে হানাফী হওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান
গণমুকাল্লিদেরা ‘হানীফ’ (حنيف) শব্দের বহুবচন ‘হুনাফা’ (حنفاء) এর অনুবাদ করেছে হানাফী। দেখুন । অতএব, এ অর্থ অনুযায়ী কুরআনের কয়েকটি আয়াতের অনুবাদ!
[অনুবাদ করেছে যুগের ইমাম কাশিফ আল Hanbali, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন]
📗 তোমরা হানাফী হয়ে আল্লাহর ইবাদত করবে
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে হানাফী হয়ে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরাঃ বাইয়্যিনাহ, আয়াতঃ ৫)
📗 তোমরা হানাফী হবে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না
حُنَفَاءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بِهِ ۚ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
আল্লাহর প্রতি হানাফী হয়ে, তাঁর সাথে শরীক না করে; এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরাঃ হাজ্জ্ব, আয়াতঃ ৩১)
📗 ইব্রাহীম আ. হানাফী ছিলেন
ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি হানাফী ছিলেন এবং শিরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। (সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ১২৩)
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ وَاتَّبَعَ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۗ وَاتَّخَذَ اللَّهُ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلًا
যে আল্লাহর নির্দেশের সামনে মস্তক অবনত করে সৎকাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে- যিনি হানাফী ছিলেন; তার চাইতে উত্তম ধর্ম কার? আল্লাহ ইব্রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১২৫)
مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَٰكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না এবং নাসারাও ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন ‘হানাফী’ এবং আত্নসমর্পণকারী। আর তিনি মুশরিকও ছিলেন না। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৬৭)
قُلْ صَدَقَ اللَّهُ ۗ فَاتَّبِعُوا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
বলুন, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন। এখন সবাই ইব্রাহীমের ধর্মের অনুগত হয়ে যাও, যিনি ছিলেন হানাফী। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৯৫)
وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি, যিনি হানাফী ছিলেন। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৩৫)
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে হানাফী হয়ে এক আল্লাহরই অনুগত এবং তিনি শির্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ১২০)
قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۚ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
আপনি বলে দিন, আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করেছেন, ইব্রাহীমের হানাফী ধর্ম। সে অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৬১)
📗 তোমরা হানাফী হও, মুশরিক হয়ো না
وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
আর হানাফী হয়ে দ্বীনের প্রতি মুখ করো এবং মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ১০৫)
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
আমি হানাফী হয়ে স্বীয় চেহারা ঐ সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরেক নই। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ৭৯)
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا ۚ فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
তুমি হানাফী হয়ে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরাঃ আর-রূম, আয়াতঃ ৩০)
.
.
📒 সংশয় নিরসন: মূলত ‘হুনাফা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে একনিষ্ঠ। আর সর্বপ্রথম মুশরিকরাই নিজেদেরকে একনিষ্ঠ মুমিন দাবি করেছে; যদিও তারা মূলত ঈমানই গ্রহণ করেনি। কারণ প্রত্যেক খারাপ লোকই নিজেকে ভালো ও ‘সহীহ’ দাবী করে। তো এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে এটাই যে, যারা আদতে ঈমানই গ্রহণ করেনি তারাই নিজেদেরকে একনিষ্ঠ ঈমানদার দাবি করছে, ব্যাপারটা অদ্ভুত না! যেমন বর্তমানে কিছু লোক হাদিস অস্বীকার করেও নিজেদেরকে আহলে হাদীস দাবি করে।
তো যাইহোক, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহিমাল্লাহ মূলত এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, যারা নিজেকে খুব ‘খাঁটি-খাঁটি’ দাবি করে এবং সহীহ প্রমাণের চেষ্টা করে তারা মূলত ভেজালযুক্ত। যেমন মুশরিকরা মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে ‘হুনাফা’ তথা একনিষ্ঠ মুমিন দাবি করত, একইভাবে হাদিস অস্বীকারকারী লা-মাযহাবিরাও নিজেদেরকে আহলে হাদিস দাবী করে।
কিন্তু এই নামধারী আহলে হাদিসরা তো পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম ও মূর্খতম জীব, তাই তারা শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর বক্তব্যের ভুল/জাল অনুবাদ করেছে এবং কুরআনে বর্ণিত হুনাফা (حنفاء) শব্দের অর্থ বুঝতে না পেরে কিংবা বুঝেও ‘একনিষ্ঠ’ শব্দটিকে জালিয়াতি করে হানাফী বানিয়ে ফেলেছে।
তাদের এসব অসংখ্য জালিয়াতিই প্রমাণ করে যে, এই কথিত আহলে হাদিসরা জন্মগতভাবে মিথ্যুক ও পথভ্রষ্ট এবং এদের ধর্মের ভিত্তিই হচ্ছে মিথ্যার উপর। কারণ, এদের ধর্মের ভিত্তি যদি সত্যের ওপর হতো তাহলে এদেরকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হতো না।
অসাধারণ লুবাব ভাই
উত্তরমুছুন