কাদিয়ানী হানাফী নাকি আহলে হাদীস
কাদিয়ানীর মাযহাব: কাদিয়ানী হানাফী নাকি আহলে হাদীস
কথিত আহলে হাদিসরা প্রচার করে বেড়ায়, কাদিয়ানী নাকি হানাফি ছিলো। আজকের প্রবন্ধে আমরা জানবো, কাদিয়ানী আসলে হানাফী ছিলো নাকি আহলে হাদীস ছিলো।
📗 কাদিয়ানী তথাকথিত আহলে হাদীস থেকে একজন
জানি, অনেকের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। কিন্তু এটাই বাস্তব। কারণ, কোনো খাঁটি মুসলিম কাদিয়ানী, নাস্তিক, শিয়া বা খৃষ্টান হওয়ার প্রথম ধাপ হলো মাযহাব ছেড়ে দেওয়া। এটি চূড়ান্ত বাস্তব কথা। লা-মাযহাব মানেই তো, নিজে নিজে কুরআন ও হাদীস পড়ে নিজের বিবেকে যা বুঝে আসে তা-ই মানা। কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অনুসরণ না করা।
আর এই ভ্রান্ত চিন্তাচেতনাই মানুষকে গোমরাহীর পথে নিয়ে যায়। এ কারণেই দেখবেন, শিয়া হোক আর কাদিয়ানী হোক, ঈসায়ী নামধারী খৃষ্টান হোক বা নাস্তিক হোক, সবাই প্রথমে মাযহাব ত্যাগ করেছে। অতঃপর তারা ইমামগণ ছেড়ে দিয়ে নিজেদের পক্ষে কেবল কুরআন-হাদীস থেকেই দলীল পেশ করে থাকে। এর মানে কী?
মানে হলো, তারা কুরআন-হাদীস পড়েছে ঠিকই, কিন্তু বিশেষজ্ঞ (ইমামগণের) ব্যাখ্যায় পড়েনি। নিজে নিজে পণ্ডিতি করেছে। তাই তারা কুরআন ও হাদীসের দলীল দেওয়ার পরও পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ।
যাইহোক, মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী প্রথম হানাফী ছিলো। যেহেতু ভারত উপমহাদেশে ইসলাম কেবল হানাফীদের মাধ্যমেই এসেছে এবং তারাই মূলত ইসলামকে প্রচার প্রসার করেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জন্মের পর থেকে মানুষজন সাধারণত হানাফীই হয়ে থাকে।
এরপর কাদিয়ানী দুর্ভাগ্যক্রমে হানাফী মাযহাব ছেড়ে দিয়ে আহলে হাদীস মতবাদ গ্রহণ করে। অতঃপর কুরআন ও হাদীসের উপর আমলের নামে নিজেকে প্রথমে মুজাদ্দিদ, তারপর ঈসা মসীহ তারপর নবীই দাবী করে বসে। বলা চলে, কাদিয়ানীর গোমরাহ হওয়ার মূল কারণই হলো, হানাফী মাযহাব ছেড়ে লা-মাযহাব হয়ে যাওয়া। তাই তো বলা হয়, মাযহাব ত্যাগের শেষ পরিণাম ইসলাম ত্যাগ।
📗 কাদিয়ানীর মাযহাব নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
কাদিয়ানী মূলত লা-মাযহাব/কথিত আহলে হাদীস ছিলো। সে হানাফী মাযহাব ছেড়ে দিয়ে মনের খায়েশ মেটাতে লা-মাযহাবী/আহলে হাদীসী মতবাদ গ্রহণ করেছিলো। কারণ, লা-মাযহাবী/আহলে হাদীসী মতবাদে আপন খেয়াল-খুশি তথা কুপ্রবৃত্তি অনুযায়ী যেকোনো কাজ করা যায়। হাদিসের নাম দিয়ে নানান অপকৌশলে হালালকে হারাম বানানো যায় আর হারামকে হালাল বানানো যায়। ফলে সে হানাফী মাযহাব ছেড়ে দিয়ে কথিত আহলে হাদীসী মতবাদ গ্রহণ করে।
এমনকি হানাফী মাযহাব ছেড়ে আহলে হাদীসী ধর্ম গ্রহণ করার সুবাদে সে ৫০ বছর বয়সে আহলে হাদীস ঘরের এক কিশোরী মেয়েকেও বিয়ে করার সুযোগ পায়।
📗 আহলে হাদীস পরিবারে তার বিয়ে
মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ছেলে মীর্যা বশীর লিখেছে— “আমার কাছে আমার আম্মা বর্ণনা করেন, আমার বিয়ের পূর্বে হযরত সাহেব [মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী] জানতে পারেন যে, তার দ্বিতীয় বিবাহ দিল্লীতে হবে। তখন তিনি বিষয়টি (আহলে হাদীস শায়েখ) মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবীকে জানান। কারণ তখন মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবীর কাছে সমস্ত আহলে হাদীস ঘরের মেয়েদের একটি লিস্ট থাকতো। আর মীর সাহেবও আহলে হাদীস ছিলেন। এবং তাঁর সাথে অনেক মিল মোহাব্বত ও দেখা সাক্ষাৎ ছিলো। তাই বাটালবী সাহেব মীর সাহেবের কথা তুললেন। তখন মীর্যা কাদিয়ানী মীর সাহেবকে চিঠি লিখলেন।
প্রথম প্রথম মীর সাহেব মির্যা কাদিয়ানীর বয়স বেশি হওয়ায় বিয়েতে অমত পোষণ করেন। কিন্তু পরে রাজী হয়ে যান। তারপর মীর্যা কাদিয়ানী সাহেব আমাকে দেখতে দিল্লী আসেন। তার সাথে শায়েখ হামেদ ও অন্যরাও ছিলেন। বিবাহ পড়িয়েছিলেন [আহলে হাদীস বিশিষ্ট শায়েখ] মীয়া নজীর হুসাইন সাহেব।
এটি ২৭শে মুহাররম ১৩০২ হিজরীর সোমবারের কথা। সেসময় আমার বয়স আঠার বছর ছিলো। হযরত সাহেব [মির্যা কাদিয়ানী] বিয়ের পর মৌলবী নজীর হুসাইন সাহেবকে পাঁচ টাকা এবং একটি জায়নামায হাদিয়া দিয়েছিলেন।
অধম বলছে যে, সে সময় প্রতিশ্রুত মসীহ সাহেবের বয়স ছিল ৫০ বছরের কাছাকাছি ছিল। আব্বাজী বলতেন যে, তোমার চাচা আমার বিয়ের দেড় দুই বছর আগেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি বলছি যে, চাচা ১৮৮৩ ঈসাব্দে ইন্তেকাল করেছেন। যেটি বারাহীন রচনার শেষ সময় ছিল। আর আব্বাজানের বিবাহ ১৮৮৪ ঈসাব্দের নভেম্বরে হয়েছে।
আমি আম্মিজান থেকে জানতে পারলাম যে, প্রথমে বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল রোববার দিন, কিন্তু হযরত বলে সোমবারে নির্ধারণ করেছেন।
[সূত্র: সীরাতুল মাহদী: ১/৫১ —লেখক: মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ছেলে মীর্যা বশীর আহমাদ]
📗 মাযহাবীদের বিরুদ্ধে কাদিয়ানীর বিষোদগার
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী স্বয়ং লিখেছে— “লোকেরা নিজেদের নাম হানাফী, শাফে'ঈ ইত্যাদি রেখেছে, এ সবই বিদ'আত। রাসূল সা. এর নাম দু’টিই ছিলো। একটি হল মুহাম্মদ আরেকটি হল আহমদ সা.। রাসূল সা. এর ইসমে আজম হল মুহাম্মদ সা.। যেমন আল্লাহ তা'আলার ইসমে আজম হল আল্লাহ। আল্লাহ নামটি বাকি সমস্ত নাম তথা হাইয়্যুন, কাইয়্যুম, রহমান, রহীম ইত্যাদির মাউসূফ। রাসূল সা. এর নাম আহমদ। ...এভাইে ইসলামী মাযহাবগুলো ভুল করেছে। কেউ নিজেদের হানাফী বলেছে তো কেউ নিজেদের মালেকী বলছে, কেউ নিজেদের শিয়া, কেউবা সুন্নী বলছে। অথচ রাসূল সা. এর নাম ছিল দুইটি। মুহাম্মদ ও আহমদ সা.। সুতরাং মুসলমানদের দুটি দলই হতে পারে। মুহাম্মদী বা আহমদী। মুহাম্মদী সে সময় যখন তার মাঝে জালাল তথা তেজস্বীতার প্রভাব প্রবল হবে, আর আহমদী তখন যখন জামাল তথা সৌন্দর্যতা প্রবলতা পাবে। [সূত্র: মালফুযাতে মির্যা কাদিয়ানী: ২/২০৮-২০৯]
এবার, আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন। মির্যা কাদিয়ানী হানাফী ছিলো নাকি লা-মাযহাব/আহলে হাদীস ছিলো?
যে লোক হানাফী, শাফে'ঈ, মালেকী ও হাম্বলী বলাকে বিদ'আত বলে থাকে, সে লোক কীভাবে লা-মাযহাব/আহলে হাদীস না হয়ে হানাফী মাযহাবী হতে পারে?
📗 কথিত আহলে হাদীসদের প্রশংসায় কাদিয়ানীদের কবিতা
ইংরেজদের আমলে আহলে হাদীসদের প্রথম প্রথম ওহাবী বলা হতো। তখন কথিত আহলে হাদীসদের বড় আলেম মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী ইংরেজদের কাছে দরখাস্ত করে নিজেদের নাম ওহাবীর বদলে “আহলে হাদীস” নামে রেজিস্ট্রার করান। এই ওহাবী তথা আহলে হাদীসদের ব্যাপারে কাদিয়ানীরা কি বলে দেখুন-
بدعتيوں کا زور تھا مکہ میں آخر نجد سے یادگار دورہ عبد الوہاب آہی گیا
মক্কায় বিদ'আতিদের শক্তি ছিলো প্রবল। অবশেষে, স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব আব্দুল ওয়াহহাব এসেই গেলেন।
একথা নির্ধিদ্ধায় স্বীকার করেছেন, আহলে হাদীস আলেম মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী স্বীয় কিতাব ‘তাহরীকে ওয়াবিয়্যাত পর এক নজর’ এর ১৬ নং পৃষ্ঠায়।
📗 আহলে হাদিসদের দৃষ্টিতে কাদিয়ানী
আহলে হাদীসদের দৃষ্টিতে কাদিয়ানীরা কাফের নয়। লুধিয়ানার উলামায়ে কেরাম ১৮৮৪ ঈসাব্দে মির্যা কাদিয়ানীর লিখিত “বারাহীনে আহমদিয়া” নামক বইয়ের ভিত্তিতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে কাফের ঘোষণা দেন। [ফাতাওয়ায়ে কাদিরিয়া: ৩ —লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ লুধিয়ানবী]
কিন্তু আহলে হাদীস আলেম মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী সাহেব তার পুস্তিকা ‘ইশা'আতুস সুন্নাহ’য় মির্যা কাদিয়ানীর এ অভিশপ্ত ‘বারাহীনে আহমদিয়া’কে নজীরবিহীন গ্রন্থ বলে প্রশংসা করে।
আজও আহলে হাদীসদের মুহাক্কিক আলেম মৌলবী ইয়াহইয়া গুন্ধালবী সাহেব বলেন, “বারাহীনে আহমদিয়া এমন কোনো কিতাব নয়, যার উপর ভিত্তি করে মির্যা কাদিয়ানীকে কাফির ফাতওয়া দেয়া যায়।” [মাতরাকাতুল হাদীস: ৩৯]
বাহ কী মুহাব্বত! স্বজাতির প্রতি কী সীমাহীন ভালোবাসা!
আহলে হাদীস আলেম সানাউল্লাহ অমৃতসরী আদালতে পর্যন্ত সাক্ষী দিয়ে বলেছেন যে, “মির্যায়ী/কাদিয়ানীরা মুসলমান। আর আমি মির্যাকে কাফের বলি না।” [ফায়সালায়ে মক্কা: ৩৬]
সানাউল্লাহ অমৃতসরী আরো বলেন, “মির্যায়ী (কাদিয়ানী)-দের পিছনে নামায শুদ্ধ হবে।” [আখবারে আহলে হাদীস অমৃতসর: ১৯১৫ ঈসাব্দ সংখ্যা]
বাহ! কাদিয়ানীদের প্রতি আহলে হাদীসদের ভালোবাসার কি চমৎকার নজরানা! তার পরও দ্বীনের শত্রু আহলে হাদীস নামধারীরা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে হানাফী প্রমাণ করতে বেহদ কোশেশ করে চলেছে। এবং গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যে রঙে-রূপে ও কাজে-কর্মে পুরোপুরি কথিত আহলে হাদীস ছিলো তা গোপন করার সীমাহীন কসরত চালাচ্ছে।
প্রবৃত্তিপূজা ও স্বাধীনচেতা মানসিকতার কারণেই যে, এ অভিশপ্ত মির্যা গোলাম কাদিয়ানী একবার ঈসা মসীহ আবার নবী হবার মত মারাত্মক দাবি করেছে তাও সাধারণ জনগণ থেকে লুকিয়ে বেড়ায়।
লিখেছেন: Lutfor Faraji ও Ariful Islam [আমার জানামতে]
সম্পাদনা: লুবাব হাসান সাফওয়ান
https/www.facebook.com/100021119554100/posts/pfbid02yT7q8iRoFwsr6JQ27UvFxCgcNwUQpEytnody9GptypZ7F6JaWHXit2zocjtDuWYQl/?app=fbl
কোন মন্তব্য নেই