Header Ads

Header ADS

খুতবা চলাকালীন সালাত আদায়

 হানাফীরা নাকি সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে য‘ঈফ হাদীসের উপর আমল করে!


খুত্ববা চলাকালীন নামায আদায়ের বিধান নাকি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু হানাফিরা য‘ঈফ হাদীসের ভিত্তিতে তা আমল করে না বরং মাকরূহ মনে করে।


লা-মাযহাবীদের দলীল:

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فَجَلَسَ فَقَالَ لَهُ ‏ "‏ يَا سُلَيْكُ قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ وَتَجَوَّزْ فِيهِمَا - ثُمَّ قَالَ - إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالإِمَامُ يَخْطُبُ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا


জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সুলায়ক গাতফানী রা. জুমআর দিনে এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা. খুতবা দিচ্ছেন। সুলায়ক রা. বসে পড়লেন। নবী সা. বললেন, হে সুলায়ক! তুমি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু'রাকআত সালাত আদায় করে নাও। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ জুমু'আহর দিন মসজিদে এলে, ইমাম তখন খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু' রাকআত সালাত আদায় করে নেবে। মুসলিম: ১৮৯৭


খণ্ডন ১: উপরিউক্ত অনুবাদ শাব্দিক ভাবে কিছুটা সঠিক হলেও মর্মের দিক থেকে সঠিক নয়, সঠিক অনুবাদ হচ্ছে-


সুলায়ক গাতফানী রা. জুমআর দিন (এমন সময়ে) মসজিদে এলেন। যখন রাসূল সা. খুত্ববা দেবেন (বা তিনি খুত্ববাহ দেওয়ার জন্য উপনীত)। সুলায়ক রা. বসে পড়লেন। রাসূল সা. বললেন, হে সুলায়ক! তুমি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু'রাকআত সালাত আদায় করে নাও। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যদি জুমু'আর দিন মসজিদে এসে ইমামকে খুত্ববাহ দেবে এমন অবস্থায় পায় (অথবা ইমামকে খুত্ববা দেওয়ার জন্য উপনীত দেখলে) সংক্ষিপ্ত আকারে দু' রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।


বোঝা গেলো, সুলাইক রা. যখন মসজিদে আসলেন তখন রাসূল সা. খুতবা দিচ্ছেন না বরং খুতবা দেওয়ার জন্য কেবল বসলেন। (আমরা পোস্টের শেষের দিকে সহীহ হাদীস দ্বারা এটি প্রমাণও করে দেবো)


প্রথম অনুবাদটি সঠিক না হওয়ার কয়েকটি কারণ-


১. يخطب এটি فعل مضارعِ এর সীগাহ।


আর জানা কথা হচ্ছে, আরবিতে فعل مضارع প্রধানত দুইটি কালের অর্থ প্রদান করে। 

(ক) Present continuous (Hi is doing)

(খ) Future Indefinite. (Hi will do)

উর্দু-ফার্সিতে বলা হয় حال এবং مستقبل. 

বাংলায় বলা হয় “বর্তমান” “ভবিষ্যত”


অর্থাৎ يخطب শব্দটি দুইটি অর্থ প্রদান করে- 

[১] তিনি খুত্ববাহ দেবেন

[২] তিনি খুত্ববাহ দিচ্ছেন। আর এই হাদীসে প্রথম অর্থটিই সঠিক।


[নিম্নের লিংক থেকে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জানতে পারবেন]

https://www.facebook.com/groups/1963480153902512/permalink/3043985639185286/?app=fbl


 ২. যদি বলি “সাহাবী জুমার দিন তখন আসলেন, যখন রাসূল সা. খুত্ববাহ দিচ্ছেন” তাহলে অনেকগুলো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।


১ 

তার মানে সাহাবীগণ জুমার দিন দেরী করে মসজিদে আসতেন, যখন রাসূল সা. খুত্ববাহ দিতেন। কিন্তু এটা অবাস্তব কথা। এমন হতেই পারে না যে সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের খুত্ববাহ চলাকালে আসতেন। অথচ পবিত্র কুরআনে জুমু‘আর আযানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّه

হে মুমিনগণ, জুম‘আর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দৌড়ে যাও (বা তাড়াতাড়ি করো)। 


এমন স্পষ্ট আয়াত থাকার পরেও সাহাবায়ে কেরাম এযুগের অলস মুসল্লীদের মতো খুত্ববাহ চলাকালে মসজিদে আসবেন। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। 


এখন কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যদি ধরেও নিই যে সুলাইক রা. এমন সময় আসলেন যখন রাসূল সা. খুত্ববাহ দেবেন বা খুত্ববাহ দেওয়ার জন্য উপনীত হয়েছেন। তবে এটাও তো দেরী! 


জবাব ১: সুলাইক রা. হচ্ছেন গাতফান গোত্রীয়। আর গাতফান গোত্র রাসুলের মসজিদ হতে বেশ খানিকটা দূর। তাই তাঁর আসতে সামান্য দেরী হতে পারে। দেরী মানে এই নয় যে তিনি একেবারে খুত্ববাহ চলাকালে আসলেন। বরং তিনি খুত্ববাহ শুরু হওয়ার পূর্বক্ষণে এসেছেন। (এর পক্ষে আমরা দলীলও পেশ করবো)


জবাব ২: সাহাবী বেশি একটা দেরী করেননি, বরং সে যুগে যেহেতু ঘড়ি ছিলো না। তাই হতে পারে রাসূল সা. একটু আগে আগে খুত্ববাহ দেওয়ার জন্য বসেছেন। এবং সাহাবায়ে কেরামের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এমতাবস্থায় সুলাইক রা. আসলেন। 


রাসূল সা. সাধারণত সকল মুসল্লী উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত খুত্ববাহ শুরু করতেন না, আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন সীমিত, তাঁদের কোনো একজন মসজিদে আসবে না। তা কল্পনাই করা যায় না। আর তাঁদের সবাই উপস্থিত হওয়া ছাড়া রাসূল সা. খুত্ববা দেবেন তা-ও মানা যায় না।


কারণ, জুমু‘আ শব্দের অর্থই হচ্ছে সবাই জমা হওয়া। এবং সবাই জমা হওয়ার অর্থ হচ্ছে, সবাইকে উদ্দেশ্য করে ভাষণ প্রদান করা।


এখন সবাই জমা হওয়া ব্যতিরেকেই যদি খুত্ববাহ শুরু হয়ে যায়, তাহলে জুমু‘আর স্বার্থকতা কী রইলো? 


অতএব যদি বলা হয়, সুলাইক রা. খুত্ববাহ চলাকালে আসলেন, তাহলে বলতে হয় রাসূল সা. সাহাবাগণের জমা হওয়ার অপেক্ষা না করেই খুত্ববাহ শুরু করে দিয়েছেন। 


সুলাইক রা. তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায না পড়েই বসে গেছেন, একথার অর্থই হচ্ছে, সে যুগে খুত্ববাহ চলাকালে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়ার নিয়ম ছিলো না। তাই তিনি রাসূলকে মিম্বরে বসে থাকতে দেখেই নিয়মমাফিক বসে গেছেন। সাহাবী ভাবলেন- রাসূল সা. মিম্বরে বসেছেন মানে তিনি এখন খুত্ববাহ দেবেন। তাই পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী খুত্ববাহ শোনার জন্য বসে পড়লেন। কারণ, খুত্ববাহ চলাকালে নামায পড়ার নিয়ম নেই, বরং মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শোনা ওয়াজিব। 


কিন্তু রাসূল সা. এখনো যেহেতু খুত্ববাহ শুরু করেননি, তাই তাঁকে বললেন, ঠিক আছে তুমি সংক্ষেপে দুই রাকাত পড়ে নাও। (কারণ, এখনো খুত্ববাহ শুরু হয়নি, আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি) 


এবং এটাই বাস্তবতসম্মত। 


উক্ত হাদীসে তাঁকে নামায সংক্ষেপ করার আদেশ দিয়েছেন, এর অর্থই হচ্ছে এখন খুত্ববাহ শুরু হবে, আর খুত্ববাহ চলাকালে নামায পড়ার বিধান নেই। অতএব তুমি খুত্ববাহ শুরু হওয়ার আগে আগেই নামাযকে সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করো। যাতে করে তোমার নামাযের কারণে খুত্ববাহ শুরু করতে বিলম্ব না হয়। 


নামায সংক্ষেপ করার আদেশ দিয়েছেন, এর আরেকটি স্পষ্ট অর্থ হচ্ছে, খুত্ববাহ চলাকালে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়া অনুত্তম ও অনুচিত কাজ। 


যদি খুত্ববাহ চলাকালেও তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়া উত্তম হতো, এবং এর বিধান থাকতো, তাহলে তিনি নামায সংক্ষিপ্ত করার আদেশ দিতেন না। 


খুত্ববাহ চলাকালে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়ার বিধান আছে, এমনটা বললে স্বীকার করতে হয়, তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায খুত্ববাহ শোনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তম। আর উত্তম কাজ তো উত্তমভাবেই পালন করা যুক্তিযুক্ত। এটিকে সংক্ষিপ্ত করতে বলা হবে কেন?


৯ ❗খুতবারত অবস্থায় রাসূল কথাও বলতেন❓

রাসূল সা. তাঁকে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন এটা যদি খুত্ববাহরত অবস্থায় হয়, তাহলে বলতে হয় রাসূল সা. খুত্ববাহরত অবস্থায় খুত্ববাহ বন্ধ রেখে কথাও বলতেন। 


অথচ খুত্ববাহরত অবস্থায় তিনি কথা বলবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারণ, জুমু‘আর খুত্ববাহ দেওয়া এবং মনোযোগসহকারে তা শ্রবণ করা উভয়টিই ওয়াজিব বিধান। আর তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায হচ্ছে মুস্তাহাব বা সুন্নাত বিধান।


রাসূল সা. একজন সাহাবীর মুস্তাহাব বা সুন্নাত আমলের জন্য নিজের ওয়াজিব আমল বন্ধ করে আদেশ দেবেন তা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? 


১০

সাহাবীকে খুত্ববাহ শোনার ওয়াজিব আমল থেকে বিরত রেখে মুস্তাহাব বা সুন্নাতের আদেশ দেবেন, এটাও অগ্ৰহণযোগ্য কথা। 


১১ 

জুমু‘আর খুত্ববাহ সপ্তাহে একদিন আসে, এবং এদিন তিনি সকলের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা শোনা থেকে সাহাবায়ে কেরামকে বিরত রেখে মুস্তাহাব আমল তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়ার আদেশ দেবেন তা অযৌক্তিক।


১২

হাদীসের শেষাংশে এসেছে, তোমাদের কেউ জুমু'আর দিন মসজিদে এলে, ইমাম তখন খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু' রাকআত সালাত আদায় করে নেবে। যদি এ অর্থ করা হয়, তাহলে বোঝা যায়, 


ইমামের খুত্ববাহরত অবস্থায় মুসল্লী আসবে এটা একটা কমন বিষয় বা সাধারণ নিয়ম। অতএব রাসূল নিয়ম করে দিয়েছেন যে, কেউ যদি ইমামের খুত্ববাহরত অবস্থায় আসে তাহলে সে আগে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়ে নেবে।


অথচ বাস্তবতা এর বিপরীত, ইমামের খুত্ববাহরত অবস্থায় মুসল্লী আসাটা জুমু‘আর প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা প্রদর্শন। সাহাবায়ে কেরাম কখনোই এমনটা করতেন না। কারণ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা জুমু‘আর আযানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসার গুরুত্বারোপ করে বলেন,


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ

হে মুমিনগণ, জুম‘আর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দৌড়ে যাও (বা তাড়াতাড়ি করো)। 


যখন সাহাবায়ে কেরাম কখনো এমনটা করতেনই না। তখন ইমাম খুত্ববাহরত থাকলে নামায আদায়ের হুকুম আসবে কোত্থেকে?


অতএব ইমাম খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু' রাকআত সালাত আদায় করার উক্ত দাবী সঠিক নয়।


১৩

বরং তিনি হাদীসের শেষাংশে এটা বলেছেন যে, 

তোমাদের কেউ যদি জুমু'আহর দিন মসজিদে এসে ইমামকে খুত্ববাহ দেবে এমন অবস্থায় পায় (অথবা ইমামকে খুত্ববা দেওয়ার জন্য উপনীত দেখলে) সংক্ষিপ্ত আকারে দু' রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।


রাসূল সা. এমন আদেশের মাধ্যমে মূলত সাহাবায়ে কেরামের একটি ভুল ভেঙ্গে দিয়েছেন, তা হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরাম মনে করতেন ইমাম খুত্ববা দেওয়ার জন্য মিম্বরে বসলে আর তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়া যায় না। (যেই কারণে সুলাইক রা. রাসূলকে মিম্বারে দেখে নামায না পড়ে বসে গেছেন) তাই রাসূল সা. এই আদেশের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ইমাম যখন খুত্ববাহ দেবে তখনই কেবল নামায পড়া যাবে না, কিন্তু যখন ইমাম এখনো খুত্ববাহ দিচ্ছে না বরং মিম্বরে বসে মুসল্লীদের অপেক্ষা করবে তখন সংক্ষিপ্ত আকারে দু' রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।


১৪

যদিও ধরে নিই যে “তিনি খুতবা দিচ্ছেন" এই অর্থটি সঠিক। 


তবুও এ কথা দ্বারা ওটাই উদ্দেশ্য যা আমি বলেছি। কারণ, ভাষা সম্পর্কে যাদের সামান্যও জ্ঞান রয়েছে তারা বুঝবে। খুতবা দিচ্ছেন মানে, খুতবা দেবেন। এটি অলংকার শাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার।


যেমন আমরা বলি,

এখনি তাকে ফোন দিচ্ছি, মানে ফোন দেবো। কিংবা

দু-একদিনের মধ্যে আমি ঢাকা যাচ্ছি মানে, দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকা যাবো। 


অর্থাৎ বর্তমান বলে ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্য ।


খণ্ডণ ২:

এখন অনেকেই বলবেন এগুলো আমার মনগড়া যুক্তি, এসব যুক্তির পক্ষে কোনো দলীলই নেই।


১. যুক্তির পক্ষে দলীল থাকা লাগে না

২. আমার কাছে এমন শক্ত একটা দলীল রয়েছে যার মাধ্যমে আমি প্রমাণ করে দেবো, সুলাইক রা. জুমার দিন যখন মসজিদে আসলেন তখন রাসূলুল্লাহ সা. খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন না বরং মিম্বারের উপর বসা ছিলেন। এ কথার পক্ষে আমি যে দলীলটা পেশ করবো তা কেউই কাটতে পারবে না। সেটা একটা হাদীস। শুধু হাদীস না, বরং টাটকা এবং সতেজ সহীহ হাদীস। সেটি কোন কিতাবের হাদীস?


হ্যাঁ, সেটি সহীহ মুসলিমেরই হাদীস। হাদীস নং ১৮৯৬। অর্থাৎ উপরিউক্ত হাদীসটির আগের হাদীস। 


عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّهُ قَالَ جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاعِدٌ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَعَدَ سُلَيْكٌ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَرَكَعْتَ رَكْعَتَيْنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ لاَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ قُمْ فَارْكَعْهُمَا ‏"‏ ‏

জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুলায়ক গাতফানী রা. শুক্রবার দিনে (মসজিদে) এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপরে বসা ছিলেন। সুলায়ক রা. সালাত আদায় না করে বসে পড়লেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দু'রাক’আত সালাত আদায় করেছ? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি দাঁড়াও দু'রাকআত সালাত আদায় করে নাও।


ইংরেজি অনুবাদ হচ্ছে, sitting on the pulpit. মানে রাসূল সা. মিম্বারের উপর বসা ছিলেন। আরবিতে হচ্ছে قَاعِدٌ عَلَى الْمِنْبَرِ, একই অর্থ। মানে রাসূল সা. মিম্বারের উপর বসা ছিলেন


এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে রাসূল সা. তখন খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন না বরং খুত্ববাহ দেওয়ার জন্য বসেছেন।


আর কিছু বলার আছে কিনা আমি জানি না, কারণ, একটি হাদিসের ব্যাখ্যা আরেকটি সহীহ হাদীস দ্বারা হয়ে গেল। অতএব ইমাম খুতবারত থাকলে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামাজ পড়ার কোন দলিল নেই।


যে হাদিসটিকে দলিল হিসেবে পেশ করা হয় সেই হাদীসটিকে আমরা অপর একটি সহীহ হাদীস দ্বারা খণ্ডন করে দিয়েছি।


খণ্ডণ ৩: জুমু‘আহর খুতবা চলাকালে সকল কাজকর্ম বন্ধ।

 

أن أبا هريرة أخبره أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت (صحيح البخارى-كتاب الجمعة، باب الإنصات يوم الجمعة والإمام يخطب، رقم الحديث-892)

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন তুমি তোমার পাশের জনকে জুমআর দিন বল-চুপ থাক এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব খুতবা দিচ্ছে, তাহলে তুমি অযথা কাজ করলে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮৯২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২০০৫}


লক্ষ্য করুন-যেখানে কাউকে চুপ করতে নিষেধ করা হয়েছে খুতবা শুনতে ডিষ্টার্ব হবে বলে, সেখানে মসজিদের মাঝে সবার সামনে নামায পড়তে শুরু করলে কি খুতবা শুনতে ব্যাঘাত ঘটবে না? কারণ নামায পড়তে শুরু করলে নামাযের জায়গা স্থীর করতে হবে, কখনো সখনো সামনে থেকে কাউকে সরাতে হবে, সামনে দিয়ে যেন কেউ না যায় ইত্যাদী রুখার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সকল কাজ কি করে বৈধ থাকে?

 

‘আমরে বিল মারূফ নাহী আনিল মুনকার’ এটা ফরজ।


কিন্তু এই হাদিস থেকে জানা যায়, খুতবা চলাকালীন এই ফরজ কাজটিও করা যাবে না। (অর্থাৎ খুতবা চলাকালীন কথা বলা হারাম, কেউ এই হারাম কাজ করলেও খুতবা চলাকালীন এই হারাম থেকেও অন্য কেউ বাধা দিতে পারবে না)


অথচ হারাম কাজ থেকে বাধা দেওয়া ফরজ। যেখানে ফরজ আমল করা যাবে না, সেখানে মুস্তহাব আমল তাহিয়্যাতুল মসজিদ কীভাবে আমল করা যাবে?


মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব, কিন্তু নামাজ পড়লে কি খুতবায় মনোযোগ দেওয়া যায়! দেখা যাচ্ছে, একটি মুস্তাহাব আমলের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ছুটে যাচ্ছে! 


[আমাদের কাছে আরও দলিল রয়েছে, দলিলগুলো পেতে কমেন্ট বক্স চেক করুন।


একজন লা-মাযহাবী ভাই খুব তাড়া দিচ্ছিল, তাই লেখা শেষ করার আগেই পোস্ট করতে বাধ্য হলাম।]


🖊️ লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

কোন মন্তব্য নেই

mattjeacock থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.