Header Ads

Header ADS

হালুম্মা —১৭ [ক]


হালুম্মা ইলা 'উলূমিল হাদীস —১৭

তাদলীস ও মুদাল্লিস রাবী সংক্রান্ত আলোচনা —১

নিশ্চয় তাদলীস হচ্ছে প্রতারণা, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। [শরহু কিতাবিত তাদলীস: ৫/৭]

৬০০ হিজরীর ইমাম ইবনু ফারহ আশ-শাফেঈ রহ. (৬২৪-৬৯৯) বলেন-

الرد مطلقا، وهو قول لبعض أصحاب الحديث وبعض الفقهاء (١)، قالوا: (٢) إن التدليس جرح في المدلس، لإيهامه سماع ما لم يسمع

কিছু কিছু আহলে হাদীস ও ফুকাহায়ে কেরামের মতে মুদাল্লিস রাবীর বর্ণনা মুতলাকান (সর্বাবস্থায়) অগ্রহণযোগ্য। তারা বলেন, নিশ্চয়ই তাদলীস মুদাল্লিসের জন্য জারাহ সমতুল্য, রাবী যা শুনেনি তা শোনার ক্ষেত্রে সন্দেহ থাকার কারণে। [আল-গারামিয়্যাহ: ৫৬]

হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহিমাহুল্লাহ এর তাদরীব গ্ৰন্থে এসেছে-

 ثُمَّ قَالَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ) مِنْ أَهْلِ الْحَدِيثِ وَالْفُقَهَاءِ (مَنْ عُرِفَ بِهِ صَارَ مَجْرُوحًا مَرْدُودَ الرِّوَايَةِ) مُطْلَقًا، (وَإِنْ بَيَّنَ السَّمَاعَ)

আহলে হাদীস (মুহাদ্দিস) ও ফুকাহাদের একটি জামাত (যারা মুদাল্লিস রাবীকে মাজরূহ এবং রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে মারদুদ সাব্যস্ত করেছেন, তাঁরা) বলেন- মুদাল্লিস রাবীর বর্ণনা মুতলাকান গ্রহণ করা হবে না যদিও স্পষ্ট শ্রবণে বর্ণনা করা হয়। (অর্থাৎ ‘হাদ্দাসানা’ ‘আখবারানা’ শব্দে বর্ণনা করলেও তার হাদিস গ্রহণ হবে না।) —তাদরীবুর রাবী: ১/২৬২

 لا سيما الشافعي، فإنه أجراه فيمن عرفناه دلس مرة

শাফে'ঈগণ কেবল ‘আন’যুক্ত নয় বরং ‘হাদ্দাসানা’ ‘আখবারানা’ ইত্যাদি শব্দে মুত্তাসিল বর্ণনা করলেও কোনো রাবির বর্ণনা গ্রহণ করেন না যে রাবী জীবনে একবারও তাদলীস করেছে বলে পরিচিত হয়েছে।

ইমাম আবু আসিম আন-নাবিল রহ. এ ব্যাপারে বলেন

إن التدليس شر كله، ودعا بعضهم على المدلسين فقال: خرب الله بيوت المدلسين، خرب الله بيوت المدلسين، ونقل عن أبي عاصم أنه قال: إن المدلس هو المتشبع بما لم يعط، والمتشبع بما لم يعط عنده تزوير؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم يقول: (المتشبع بما لم يعط كلابس ثوبي زور)، لأن من فعل ذلك أصلا ليس بمحدث، ويضع نفسه أمام الناس على أنه محدث، أو ليس بفقيه، ويضع نفسه أمام الناس على أنه فقيه.

নিশ্চয় তাদলীস সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং আহলে হাদীসের কিছু অংশ মুদাল্লিসীন এর উপর এই বদদোয়া করতেন যে- হে আল্লাহ! তাদলীসকারীদের ঘরগুলোকে বিরান (ধ্বংস) করে দিন, হে আল্লাহ! মুদাল্লিসীনের ঘরগুলোকে বিরান (ধ্বংস) করে দিন। তিনি আরো বলেন নিশ্চয় মুদাল্লিস তা নিয়ে পরিতৃপ্ত যা তাকে দেওয়া হয়নি। আর যে ব্যক্তি এমন বিষয় নিয়ে পরিতৃপ্ত যা তাকে দেওয়া হয়নি তার নিকট কেবল প্রবঞ্চনা বা জালিয়াতিই রয়েছে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এমন বিষয় নিয়ে পরিতৃপ্ত যা তাকে দেওয়া হয়নি, সে ঐ লোকের মতো যে দুপ্ৰস্থ মিথ্যার পোশাক পরল। কাজেই যে এমনটি করে সে মূলত মুহাদ্দিসই না; কিন্তু সে নিজেকে মুহাদ্দিস হিসাবে মানুষের সামনে পেশ করেছে, বা ফকীহ নয় কিন্তু সে নিজেকে ফিকহবিদ হিসাবে মানুষের সামনে পেশ করেছে। [শরহু কিতাবিত তাদলীস: ৫/৭]

وقال آخرون: إن التدليس غش، والنبي صلى الله عليه وسلم قال: (من غشنا فليس منا).

অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বলেন, নিশ্চয় তাদলীস হচ্ছে প্রতারণা, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। [শরহু কিতাবিত তাদলীস: ৫/৭]

وكل هذه الأقوال تعضد قول من قال: إن المدلس مجروح، فلا يؤخذ منه حديث، فلذلك ردوا حديثه مطلقا، سواء عنعن أو صرح بالتحديث، وموجب هذا القول رد الأحاديث التي وردت عن الأعمش وعن الثوري وعن ابن عيينة وعن الزهري وعن الوليد بن مسلم وعن هشيم بن بشير

এই সমস্ত কথা তাদের কথাকে সমর্থন করেছে যারা বলেছেন যে মুুদাল্লিস দোষযুক্ত, এবং তাদের হাদীস গ্রহণ করা হবে না। অতএব তাদের প্রত্যেকটি হাদিসকেই প্রত্যাখ্যান করা হবে মুতলাকান। চাই আন-যুক্ত বর্ণনা করুক বা স্পষ্ট বর্ণনা করুক। এই উসুলের ভিত্তিতে সেই সমস্ত হাদিসগুলো প্রত্যাখ্যান করা হবে যা আ'মাশ, সুফিয়ান সাওরি, ইবনে উয়ায়নাহ, জুহুরি, ওয়ালিদ ইবনে মুসলিম, হুসাইম ইবনে বাসীর থেকে বর্ণিত হয়েছে। [শরহু কিতাবিত তাদলীস: ৫/৭]

মুদাল্লিস রাবীর বর্ণনা সম্পর্কে আমীরুল মু'মিনীন ফিল হাদীস ইমাম শু'বাহ’র মন্তব্য

وأصحاب هذا القول قالوا: أما المدلس فمجروح عندنا أما شعبة فقال: التدليس أخو الكذب وقال عن نفسه: لأن يزني خير له من أن يدلس، فجعل التدليس أخا الزنا

হাদীস শাস্ত্রের সম্রাট আমীরুল মু'মিনীন ফিল হাদীস ইমাম শু'বাহ এবং তার সাথীগণ বলেন- মুদাল্লিস রাবী আমাদের কাছে ‘জারাহ’কৃত (দোষযুক্ত)। হাদীস শাস্ত্রের সম্রাট শু'বাহ আরো বলেন- তাদলীস হলো মিথ্যার ভাই। “কারো জন্য তাদলীস করার চেয়ে যেনায় লিপ্ত হওয়াটা উত্তম”। অতএব তাদলীস যেনারও ভাই প্রমাণিত হলো। [শরহু কিতাবিত তাদলীস: ৫/৭]

(অন্যান্য কিতাবে কথাটি এভাবে এসেছে- আমি যেনায় লিপ্ত হই, এটা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় তাদলীস করার চেয়েও। —তাদরীবুর রাবী: ১/২৬২। অর্থাৎ তাঁর কাছে তাদলীস করার চেয়ে যেনায় লিপ্ত হওয়াটা অধিক পছন্দনীয় বা তাদলীস করাটা যেনায় লিপ্ত হওয়ার চেয়ে মারাত্মক। —অনুবাদক) 

ولذلك ابن الصلاح لما سمع هذه الكلمة ونقلها عن الإمام أمير المؤمنين في الحديث شعبة أنكر عليه، وقال: وهذا فحش في القول، فجاء البلقيني فأنكر على ابن الصلاح وعضد قول شعبة، وقال: ولم لا وهو يعمي على الناس حديث النبي صلى الله عليه وسلم! وإن التدليس أضر من الربا؛ لأن الربا فيه الظلم في أمور دنيوية، أما الحديث ففيه الظلم في أمور دينية، من تضييع للشرع، وجعل الحرام حلالا، أو الحلال حراما، فقال: فإن التدليس أضر من الربا، وقد وردت الآثار أن درهما واحدا أشد من ست وثلاثين زنية، وقال: والتدليس أضر من الزنا، فيكون حديث واحد فيه تدليس أشد من ست وثلاثين زنية

এ কারণে ইবনুস সালাহ ইমাম শু'বাহ’র এমন কথার সমালোচনা করলে ইমাম বুলকীনী উল্টো ইবনুস সালাহ’র সমালোচনা করে বলেন, কেনই বা (তাদলীস যেনায় লিপ্ত হওয়ার চেয়েও মারাত্মক) হবে না? কারণ সে তো মানুষকে রাসূলের হাদীসের প্রতি অন্ধ করে দেয়। বরং সুদের চেয়েও মারাত্মক, কারণ সুদের ক্ষেত্রে দুনিয়াবী বিষয়ে জুলুম করা হয়, আর হাদীস এর ক্ষেত্রে দ্বীনী বিষয়ে জুলুম করা হয় এবং শরীয়ত বিকৃত করা হয়, হারামকে হালাল বানানো হয়, হালালকে হারাম বানানো হয়। কাজেই তিনি বলেছেন, তাদলীস সুদ থেকেও নিকৃষ্ট ও ক্ষতিকর। আর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে এক দিরহাম সুদ ৩৬ জন নারীর সাথে যেনা করার চেয়েও মারাত্মক। (অন্য হাদীসে রয়েছে, মায়ের সাথে যেনা করার সমতুল্য)। আর তাদলীস করা হচ্ছে যেনার চেয়েও মারাত্মক। অতএব প্রমাণিত হলো, যে তাদলীস ৩৬ জন নারী (ও আপন মায়ের) সাথে যেনা করার চেয়েও মারাত্মক। [শরহু কিতাবিত তাদলীস: ৫/৭]

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

কোন মন্তব্য নেই

mattjeacock থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.