Header Ads

Header ADS

হদ্দে যিনা সম্পর্কে হানাফী দের ওপর আপত্তির জবাব

হানাফীদের আজব ফতোয়া • একটি মূর্খতাসূলভ আপত্তির জবাব
 
হদ্দে যিনা সম্পর্কে লা-মাযহাবদের মূর্খতাসূলভ আপত্তির জবাব

📗 আপত্তি

কেউ যদি মাহরাম মহিলাদের কাউকে বিয়ে করে এবং সহবাস করে (যেমন: মেয়ে, বোন, মা, ফুফু, খালা ইত্যাদি) তাহলে তার উপর কোনো হদ্দ নেই। আবু হানিফা (রাহি.) এর কথা অনুযায়ী যদিও সে জানে যে এটা তার জন্য হারাম। [ফতোয়ায়ে আলমগীরী (মিশরীয় ছাপা) ৩য় খন্ড ৪৬৮ পৃষ্ঠা]

وكذلك لو تزوج بذات رحم محرم نحو البنت والأخت والأم والعمة والخالة وجامعها لا حد عليه في قول أبي حنيفة رحمه الله تعالى وإن قال: علمت أنها علي حرام . 

অথচ হাদীস অনুযায়ী মাহরামের সাথে সহবাসের শাস্তি দেখুন

 ১ম হাদীস:

عَنْ يَزِيدَ بْنِ الْبَرَاءِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لَقِيتُ عَمِّي وَمَعَهُ رَايَةٌ، فَقُلْتُ لَهُ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى رَجُلٍ نَكَحَ امْرَأَةَ أَبِيهِ، فَأَمَرَنِي أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ، وَآخُذَ مَالَهُ

ইয়াযীদ ইবনু বারা' (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তখন তার সঙ্গে একটি ঝাণ্ডা ছিলো। আমি তাকে বললাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন- যে তার পিতার স্ত্রীকে (সৎ মাকে) বিয়ে করেছে। তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন তাকে হত্যা করতে এবং তার সম্পদ নিয়ে আসতে। [সুনান আবু দাউদ হা:৪৪৫৭ —সহিহ]

২য় হাদীস:

 عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَنْ وَقَعَ عَلَى ذَاتِ مَحْرَمٍ فَاقْتُلُوهُ

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মাহরামের সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকে হত্যা করো। [সুনান ইবনু মাজাহ: ২৫৬৪ —হাসান] 

৩য় হাদীস:

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ أَشْعَثَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ مَرَّ بِي خَالِي أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ وَمَعَهُ لِوَاءٌ فَقُلْتُ أَيْنَ تُرِيدُ قَالَ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى رَجُلٍ تَزَوَّجَ امْرَأَةَ أَبِيهِ أَنْ آتِيَهُ بِرَأْسِهِ
বারা' (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমার মামা আবূ বুরদাহ (রা.) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার হাতে একটি পতাকা ছিল। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, এক লোক তার বাবার স্ত্রী (সৎমাকে) বিয়ে করেছে। আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছেন তার মাথা কেটে তার নিকট আনার জন্য। [তিরমিযী ১৩৬২ সহীহ]”

📗 দালিলিক জবাব

প্রারম্ভিকতা: আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এমন যুগে এসেছি যখন মানুষ ইসলামের এমন সব বিষয়েও কলম ধরে যে বিষয়ে তার ন্যূনতম জ্ঞানও নেই; প্রাথমিক ধারণাটুকুও নেই। এ যেন এবিসিডি না জেনেও ইংরেজি গ্রামার নিয়ে কথা বলা!

ইসলামে ব্যাভিচারের শাস্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ কিছু লোক এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইসলামের প্রাথমিক বিষয়ে বিন্দুমাত্র না জেনেও এ বিষয়ে হানাফীদের বিরুদ্ধে বে-ফায়দা কালি খরচ করতে লজ্জাবোধ করে না। কিয়ামত যে সন্নিকটে এটাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

📒 তাদের অভিযোগ: 

ইমাম আবু হানীফা বলেছেন, কেউ যদি মাহরাম মহিলাদের কাউকে বিয়ে করে সহবাস করে (যেমন: মেয়ে, বোন, মা, ফুফু, খালা ইত্যাদি) তাহলে তার উপর হদ্দ নেই; যদিও সে জানে যে এটা তার জন্য হারাম। 

খণ্ডন: তিনি একদম সঠিক কথাটাই বলেছেন। কারণ, একথা তিনি নিজ থেকে বানিয়ে বলেননি বরং এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই দেখানো পথ। অন্যভাবে বলতে গেলে তিনি এ ফতোয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস অনুসারেই দিয়েছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হদ কায়েম করেননি। 

বিষয়টি বুঝতে হলে আগে আপনাকে ‘হদ ও শাস্তি’ সম্পর্কে জানতে হবে। হদ ও শাস্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে- তা বুঝতে হবে। আসুন জেনে নিই, হদ ও শাস্তির মধ্যে পার্থক্য কী।

📗 শাস্তি

শাস্তি তো আমরা কম বেশ সবাই বুঝি; ছাত্র পড়া পারেনি তো শিক্ষক তাকে শাস্তি দিয়েছে। ধর্ষক ধর্ষণ করেছে তো আদালত তাকে শাস্তি দিয়েছে। সমাজ ব্যবস্থা ও অবস্থা অনুযায়ী আরো বহু ধরনের ছোটখাটো বা বড় শাস্তি হতে পারে।

📗 হদ/হদ্দ

এবার হদ কাকে বলে তা জানা যাক। ইসলামী পরিভাষায় হদ হচ্ছে “শরী'আহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি”। এতে কোন প্রকারের হেরফের হয় না; সব সময় একই রকম থাকে। হদের ক্ষেত্রে কাজী বা বিচারকের নিজস্ব মত চলে না।

হদ সম্পর্কে অসংখ্য দলিল দেওয়া যাবে, তবে আমরা লা-মাযহাব বন্ধুদেরকে সহজেই বোঝানোর স্বার্থে তাদেরই ঘরের আলেম শায়েখ সালেহ আল ফাওযানের বক্তব্য উল্লেখ করছি, তিনি বলেন- 

الحدود في الاصطلاح الشرعي: عقوبة مقدرة شرعا في معصية

শার'ঈ পরিভাষায় হদ হচ্ছে, পাপজনিত কারণে শরী'আহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট শাস্তি। [আল-মুখাল্লাসুল ফিকহী: ২/৫২১]

এরপরেও কেউ যদি বুঝতে না চায় তবে তার কাছে আমার প্রশ্ন, ছাত্র পড়া পারেনি তো শিক্ষক তাকে শাস্তি দিয়েছে- এটা কি হদ? ধর্ষক ধর্ষণ করেছে তো আদালত তাকে শাস্তিস্বরূপ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে- এটাও কি হদ? আশা করি লা-মাযহাব বন্ধুরাও এগুলোকে হদ বলবে না। 

অতএব শাস্তি ও হদের মধ্যে পার্থক্য জানা গেলো; হদ হচ্ছে শরী'আহ কর্তৃক নির্দিষ্ট শাস্তি। আর ‘শাস্তি’ হচ্ছে যে কোনো ধরনের শাস্তি। তর্ক শাস্ত্রের ভাষায় বলতে গেলে, প্রত্যেক হদ শাস্তি, কিন্তু প্রত্যেক শাস্তি হদ নয়।

📗 যিনার হদ কী

এবার জানতে হবে যিনার হদ কী? সর্বসম্মতিক্রমে হদ্দে যিনা বা যিনার হদ হচ্ছে বিবাহিতদের জন্য ‘রজম’ (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) আর অবিবাহিতদের জন্য ১০০ বেত্রাঘাত। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন-

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ
ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত করো। [সূরা নূর:২]

অতএব এর বাইরে যত প্রকার শাস্তি দেওয়া হবে, কোনো কিছুই হদের আওতাভুক্ত নয়। যেমন বিভিন্ন দেশে ব্যভিচারের বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়, এগুলোকে কেবল শাস্তিই বলা হবে, হদ বলা যাবে না। কারণ, বিভিন্ন দেশে যে শাস্তিগুলো দেওয়া হয় এগুলো শরী'আহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি নয়; বরং দেশীয় আইনে প্রচলিত একটি শাস্তি। অতএব এসব শাস্তিকে কখনোই হদ বলা হবে না। 

এতক্ষণে হয়তো বুঝতে পেরে গেছেন যে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর বক্তব‌্য “মহারামকে বিয়ে করে সহবাস করলে তার উপর হদ জারী হবে না- এর মানে কী?

তিনি ‘হদ নেই’ বলতে এটাই বুঝিয়েছেন যে, তার জন্য শরী'আহ কোনো শাস্তি নির্ধারণ করে দেয়নি। কিন্তু তাকে কোনোই শাস্তি দেওয়া হবে না এ কথা তিনি কোথাও বলেননি। বরং বিচারক যেমন ইচ্ছা শাস্তি দিতে পারেন। 

আর ‘হদ নেই’ বলতে শরী'আহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট কোনো শাস্তি নেই এটা তাঁকে বোঝাতে হবে কেন- ফকীহগণ ও সেকালের সাধারণ মানুষজনও ‘হদ নেই’ বলতে এটাই বুঝতেন যে শরী'আহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি নেই; কিন্তু অন্য শাস্তি থাকতে পারে। আর তারা তো এ যুগের লোকদের মতো মস্তিষ্কশূন্য ছিলেন না যে ‘হদ নেই’ বলতে তারা ‘কোনো শাস্তি নেই’ এটা বুঝবে। 

এটা তো কোন পাগলেও ভাবতে পারে না যে, কেউ নিজের মাহরামকে বিয়ে করে অপকর্ম করবে কিন্তু এর জন্য শাস্তি পাবে না! যেখানে কোনো সাধারণ নারীর সাথে যিনা করলে শাস্তি রয়েছে সেখানে মাহরামের সাথে যিনা করলে শাস্তি থাকবে না- এটা কেমন কথা? একজন ইমাম এমন কথা কীভাবে বলতে পারেন?

যাইহোক, যখন আমরা হদ ও শাস্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারলাম। এবার আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহরামকে বিয়ে করে সঙ্গম করা ব্যক্তির উপর হদ কায়েম করেছেন কিনা।

১ম হাদীস:

عَنْ يَزِيدَ بْنِ الْبَرَاءِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لَقِيتُ عَمِّي وَمَعَهُ رَايَةٌ، فَقُلْتُ لَهُ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى رَجُلٍ نَكَحَ امْرَأَةَ أَبِيهِ، فَأَمَرَنِي أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ، وَآخُذَ مَالَهُ

ইয়াযীদ ইবনু বারা' (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তখন তার সঙ্গে একটি ঝাণ্ডা ছিলো। আমি তাকে বললাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন- যে তার পিতার স্ত্রীকে (সৎ মাকে) বিয়ে করেছে। তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন তাকে হত্যা করতে এবং তার সম্পদ নিয়ে আসতে। [সুনান আবু দাউদ হা:৪৪৫৭ —সহিহ]

২য় হাদীস:

 عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَنْ وَقَعَ عَلَى ذَاتِ مَحْرَمٍ فَاقْتُلُوهُ

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মাহরামের সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকে হত্যা করো। [সুনান ইবনু মাজাহ: ২৫৬৪] 

৩য় হাদীস:

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ أَشْعَثَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ مَرَّ بِي خَالِي أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ وَمَعَهُ لِوَاءٌ فَقُلْتُ أَيْنَ تُرِيدُ قَالَ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى رَجُلٍ تَزَوَّجَ امْرَأَةَ أَبِيهِ أَنْ آتِيَهُ بِرَأْسِهِ
বারা' (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমার মামা আবূ বুরদাহ (রা.) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার হাতে একটি পতাকা ছিল। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, এক লোক তার বাবার স্ত্রী (সৎমাকে) বিয়ে করেছে। আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছেন তার মাথা কেটে তার নিকট আনার জন্য। [তিরমিযী ১৩৬২ সহীহ]

কী আশ্চর্য হচ্ছেন? আরে এই হাদিসগুলো তো অভিযোগকারী ইমাম আবু হানিফার বিরুদ্ধে দলিল হিসেবে এনেছেন! এখন দেখি অভিযোগ খণ্ডনকারীও একই হাদিসগুলো ইমাম আবু হানিফার পক্ষে ব্যবহার করেছেন।

হয়তো আরও আশ্চর্য হচ্ছেন যে, এই হাদিসগুলোতে তো শাস্তির কথা রয়েছে; কিন্তু ইমাম আবু হানিফা তো বলেছেন হদ নেই; তাহলে ইমাম আবু হানীফার কথার কী হবে?

হ্যাঁ ভাই, আপনি ঠিকই ধরেছেন। প্রথমেই বলে রাখি, হাদিসগুলো বাস্তবিকই ইমাম আবু হানিফার পক্ষের দলীল অর্থাৎ হদ না থাকার দলিল; কিন্তু কীভাবে? ইমাম আবু হানিফা বলেছেন এ ক্ষেত্রে ‘হদ নেই’, অথচ হাদীসে শাস্তি কথা এসেছে। এসবের জবাব সামনেই পেয়ে যাবেন!

রাসূলের হাদিসগুলো থেকে জানা গেলো, মাহরামের সাথে বিয়ে করে সহবাস করলে তার উপর হদ নেই। খোদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমন লোকদের উপর হদ কায়েম করেননি: বরং কতল করে সম্পদ নিয়ে আসার হুকুম দিয়েছেন। আর কতল করে সম্পদ নিয়ে আসাটা তো শার'ঈ হদ নয় বরং শাস্তি, কারণ আমরা জানি, যিনার হদ হচ্ছে দুই প্রকার: 

১ম: রজম অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপে হত্যা- যদি বিবাহিত হয়।
২য়: ১০০ বেত্রাঘাত- যদি অবিবাহিত হয়।

কিন্তু উপরিউক্ত তিনটি হাদিসের কোথাও কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনার হদ তথা রজম/১০০ বেত্রাঘাত এর হুকুম দিয়েছেন? তিনি তো রজমের হুকুমও দেননি, বেত্রাঘাতের হুকুমও দেননি। তার মানে আল্লাহর রাসূল নিজেই মনে করতেন- এর জন্য হদ নেই। যদি হদ থাকতো তাহলে তো রজম বা ১০০ বেত্রাঘাত প্রদান করতেন।

তাহলে ইমাম আবু হানীফার দোষ কোথায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হদ কায়েম করেননি, তাই তিনি বলেছেন হদ নেই; এখানে তাঁর ভুলটা কোথায়?

আর একটা বিষয় লক্ষ্য করুন, মাহরামের সাথে বিয়ে করলে বিয়ে হয় না; অর্থাৎ এটি বাতিল বিয়ে। সে হিসেবে মাহরামকে বিয়ে করা লোকটি অবিবাহিত আর অবিবাহিতের হদ হচ্ছে ১০০ বেত্রাঘাত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল তার উপর হদ প্রয়োগ (১০০ বেত্রাঘাত) না করে সরাসরি হত্যা করেছেন, এর অর্থ হচ্ছে তাঁর মতে এক্ষেত্রে হদের বিধান নেই। কিংবা ঐ লোকটি যদি বিবাহিত হয়ে থাকে তাহলে তার হদ হচ্ছে রজম করা; কিন্তু আল্লাহর রাসূল তাকে রজমও করেননি। অর্থাৎ তিনি কোনভাবেই হদ কায়েম করেননি।

তো আমরা দেখতে পাচ্ছি- আল্লাহর রাসূল নিজেই হদ কায়েম করেননি অথচ কিছু লোক ইমাম আবু হানিফাকে দোষারোপ করছে!

📗 তাদের পেশকৃত হাদিসগুলো নিয়ে কিছু কথা

আজীব মূর্খতা, হদের পক্ষে ওকালতি করতে এসে দলিল দিয়েছে হদের বিপক্ষের হাদীস (শাস্তির হাদিস) দ্বারা! অথচ হদ কায়েম না হওয়ার ক্ষেত্রে এই হাদীসগুলোই আমাদের দলিল। হানাফিদের কিতাবসমূহে এই হাদিসগুলো দিয়েই ইমাম আবু হানিফার পক্ষে দলিল দেওয়া হয়। মূলত তারা জানেই না যে হদ আর শাস্তির মধ্যে বড়সড় একটা পার্থক্য রয়েছে। তারা মনে করেছে, হদ যা শাস্তিও তা অর্থাৎ উভয় শব্দ সমার্থক। তাইতো তারা খুশিমনে বলছে “ইমাম আবু হানিফা বলেছে এমন ব্যক্তির উপর কোন হদ বা শাস্তি নেই”। ‘হদ বা শাস্তি’ এই শব্দ দুটোকে তারা যেভাবে ক্লোজ করে বলছে, মনে হচ্ছে হদ ও শাস্তি একই জিনিস! 

যারা হদ আর শাস্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝে না, তারা আসে হদের বিষয়ে কথা বলতে ও ইমাম আবু হানিফার ভুল ধরতে! কিয়ামত কি সন্নিকটে নয়?

দ্বিতীয়ত: ইমাম আবু হানিফা রহ. কি বলেছেন ‘হদ বা শাস্তি নেই’? তিনি তো বলেছেন কেবল ‘হদ নেই’- শাস্তি শব্দটা তিনি উল্লেখই করেননি। তাহলে আমাদের লা-মাযহাব বন্ধুরা কোন যুক্তিতে তার নামে বলছে যে, তিনি নাকি বলেছেন, ‘হদ বা শাস্তি নেই’? এটা কি তাঁর নামে মিথ্যারোপ নয়? 

📒 কিছু প্রশ্ন

তারা পারলে একটা হাদিস দেখাক যে, কেউ মাহরামের সাথে অপকর্ম করার পর আল্লাহর রাসূল তার উপর শার'ঈ হদ জারী করেছেন; অর্থাৎ তাকে রজম বা পাথর নিক্ষেপে হত্যা কিংবা ১০০ বেত্রাঘাত করেছেন?

📒
যে তিনটে হাদিস দেওয়া হয়েছে এই তিন হাদিসের মধ্যে কোথায় হদ কায়েম হয়েছে? আল্লাহর রাসূল তাদেরকে যে শাস্তি দিয়েছেন তা কি হদ? যিনার হদ তো সুনির্দিষ্ট যা আমরা কুরআন থেকেই জেনেছি। অথচ তিনি তাকে হত্যা করে তার সম্পদও নিয়ে আসতে বলেছেন? হত্যা করে সম্পদ নিয়ে আসা কি যিনার শার'ঈ হদ?  

📒
বাংলাদেশে শরী'আহ শাসন নেই, যিনার হদও নেই। কিন্তু প্রচলিত আইনে নানা প্রকারের শাস্তি রয়েছে। আবার খ্রিস্টান ধর্মেও ব্যাভিচার বা ধর্ষণের বিভিন্ন শাস্তি রয়েছে কিন্তু সেসব শাস্তিকে হদ বলা হয় না। তো যদি কেউ বলে বাংলাদেশে বা খৃস্টন ধর্মে হদ্দে যিনা নেই- এর মানে কি বাংলাদেশে বা খৃস্টান ধর্মে ব্যভিচারের কোনো শাস্তিই নেই?

শাস্তি তো অবশ্যই রয়েছে কিন্তু শার'ঈ হদ নেই- এটা তো আমাদের লা-মাযহাব বন্ধুরাও স্বীকার করে। ইমাম আবু হানিফাও এ কথাই বলেছেন যে, এর জন্য শার'ঈ হদ নেই।  

📒
অবশেষে বেচারা ও পড়াশোনা না-জানা লা-মাযহাব বন্ধুদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি- যখন কেউ বলেন- ‘এর জন্য হদ নেই’, এর অর্থ হচ্ছে শরী'আহ এর জন্য কোনো শাস্তিকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়নি। কিন্তু শাস্তি তো অবশ্যই রয়েছে।

লুবাব হাসান সাফওয়ান

কোন মন্তব্য নেই

mattjeacock থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.