ইমাম বায়হাকীর ভ্রান্তি
ইমাম বায়হাকি উস্তায হারেসীর এই হাদীসটি (مَن كانَ لَهُ إمامٌ فَقِراءَةُ الإمامِ لَهُ قِراءَةٌ) উল্লেখ করে বলেছেন- فَإنَّهُ كَذّاب، لا يُحْتَجُّ بِهِ.
অর্থাৎ, হারেসী মিথ্যুক; তাঁর কথার দ্বারা দলীল দেওয়া যাবে না! [খিলাফিয়াত: ২/৪৮২]
তাকে মিথ্যুক অপবাদ দেওয়ার ব্যাপারে পরে আসছি, আগে এ হাদীসটা নিয়ে আলোচনা করি।
তিনি মিথ্যুক, এ কারণে হাদিসটা গ্রহণযোগ্য নয়? অথচ হাদীসটি তিনি ব্যতীত অন্যান্য অসংখ্য সূত্রে এসেছে! তাঁর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটা তিনি হারেসীর অজুহাতে বাদ দিয়েছেন। তো অন্যান্য সূত্রে যে হাদীসগুলো এসেছে- সেগুলোর ব্যাপারে বায়হাকি কী বলবেন?
অন্যান্য আরো যেসব গ্রন্থে এসেছে:
তাহাবী: হাদীস নং-১২৯৪, মুসনাদে আবী হানীফাহ, হাদীস নং-২৫, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, মুজামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৭৫৫,সুনানে দ্বারা কুতনী, হাদীস নং-১২৩৩, মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭,মা'রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীসনং-৩৭৬৪, মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং-৩৭৭৯।
এ হাদীসটির ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য-
১. আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ বলেন, এটি মারফুর চেয়েও অধিক সহীহ। [আল-আহকামুল কাবীর: ২/৪৭২]
২. আল্লামা বুসিরী রহ. বলেন, এর সনদটি বুখারী মুসলিমের সনদের মতই সহীহ। [ইতহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ: ২/১৬৮]
৩. আল্লামা কামাল ইবনে হুমাম রহঃ বলেন, মুসলিমের শর্তানুপাতে এ হাদীসটির সনদ সহীহ। {শরহে ফাতহুল কাদীর: ১/৩৪৬}
৪. আল্লামা সানআনি রহঃ বলেন, অনেক সূত্রে তা বর্ণিত। এটি গ্রহণ করা আবশ্যক। [আল ইদ্দাতু আলাল আহকাম: ২/২৬৮]
৫. আলবানী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান। [সহীহ ইবনে মাজাহ, বর্ণনা নং ৬৯৯, সহীহুল জামে, বর্ণনা নং ৬৪৮৭]
৬. আলবানী রহ. আরো বলেন, মুসনাদে আহমদ বিন মানী এর সনদ প্রমাণিত হলে এটি সহীহ ও মাউসূল, নতুবা সহীহ সনদের মুরসাল। আর তার অনেক তুরুক রয়েছে যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। [আসলু সিফাতিস সালাত: ১/৩৫৫]
৭. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন, এর অনেক তুরুক রয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। [উমদাতুল কারী: ৬/১৭]
৮. আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন, এর সনদ সহীহ। [শরহে মুসনাদে আবী হানীফা: বর্ণনা নং ৩০৮]
৯. আলবানী রচিত সিফাতি সালাতিন নাবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ যা লা-মাযহাবীদের নিজস্ব প্রকাশনী তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা নাম “রাসূল সাঃ এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি” নামক বইয়ের ৮৫ নং পৃষ্ঠার শুরুতে উক্ত হাদীস এনে আলবানী সাহেবের যে টিকা লিখা হয়েছে, তাতে পরিস্কার লিখা হয়েছে “শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া উক্ত হাদীসকে শক্তিশালী বলেছেন।
[রাসূল সা. এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি- নাসীরুদ্দীন আলবানী কৃত, প্রকাশক: তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা: ৮৫]
উপরের আলোচনা থেকে পরিস্কার বুঝা গেলো উপরোক্ত হাদীসটি সহীহ হাদীস। অতএব, বায়হাকির কথার কীইবা মূল্য থাকলো?
কোন মন্তব্য নেই