Header Ads

Header ADS

সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করার হাদীসটি যে কারণে প্রত্যাখ্যাত


ইবনে ওমর রা. থেকে সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করার হাদীসটি যে কারণে প্রত্যাখ্যাত

হঠাৎ করে ফেসবুকে এক আহলে হাদিস ভাইয়ের মাধ্যমে সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করার বিষয়টি বহুল প্রচারিত হলো। তিনি এ ব্যাপারে ইবনে ওমর রা. থেকে একটি আসারকে দলিল হিসেবে পেশ করছেন।

আসারটি হলো- ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

رُبَّمَا أَفْطَرَ ابْنُ عُمَرَ عَلَى الْجِمَاعِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কখনো কখনো স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করতেন। [মু'জামুল কাবীর: ১২/২৬৯]


এখন আমরা জানবো, হাদীসটি কোন কোন কারণে প্রত্যাখ্যাত:

বর্ণনাটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রথম কারণ

ইবনে সীরীন রহ. হাদীসটি ইবনে ওমর রা. থেকে সরাসরি শ্রবণ করেননি; বরং এটি অন্য কারো কাছ থেকে শোনা কথা- যার কোনো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি নেই।

শ্রবণ না করার পেছনে কয়েকটি কারণ:

১. ইবনে সীরীন রহ. ইবনে ওমর রা. থেকে একটি মাত্র হাদীস শ্রবণ করেছেন। 

قال ابن معين: سمع من ابن عمر حديثًا واحدًا

ইয়াহয়া ইবনে মা'ঈন রহ. বলেন- ইবনে সীরীন ইবনে ওমর রা. থেকে একটি মাত্র হাদীস শ্রবণ করেছেন। [আত-তিবয়ান ফিত-তাখরীজ: ৭/১৩৮]

যদি তিনি একটি মাত্র হাদীসই শ্রবণ করে থাকবেন, নিশ্চয়ই হাদীসটি এটি হবে না। কারণ, প্রথম দেখাতেই কেউ নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে সহবাসের কথা কাউকে বলবে না; তাও আবার রামাদ্বান মাসে সহবাসের মাধ্যমে ইফতারের বিষয়টি।

২. আর এমনিতেই ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু’র মতো একজন জবরদস্ত সাহাবী নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে সহবাসের বিষয়টি কাউকে বলবেন না এটাই স্বাভাবিক। এতে গায়রাত বা আত্মমর্যাদার বিষয়টিও ক্ষুন্ন হয়। একজন আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে সহবাসের কথা কখনোই কাউকে বলবেন না। তা-ও যদি হয় রমজান মাসে সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করার বিষয়। 

৩. হাদীসটির বর্ণনা ভঙ্গি থেকেও বোঝা যায়, তিনি সরাসরি ইবনে ওমর থেকে সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করার বিষয়টি শুনেননি; বরং তা অন্য কারো কাছ থেকে শুনেছেন। যদি ইবনে ওমর থেকে শুনতেন, তাহলে বর্ণনাভঙ্গি স্বভাবতই এমন হতো যে, আমাকে ইবনে ওমর রা. বলেছেন, আমি কখনো কখনো স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করি।

৪. বর্ণনা ভঙ্গি থেকে এটাও বোঝা যায় যে, তিনি সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করতেন- এ বিষয়টি অতি স্বাভাবিক ছিলো যা তিনি ইবনে সীরীনকে নির্দ্বিধায় বলতেন। অথচ নিজের সহবাসের কথা অন্যকে বলার ব্যাপারে হাদীসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কাজেই ইবনে ওমর রা. থেকে সরাসরি এমন কথা শোনা অবাস্তব। 

৫. ইবনে সীরীন রহ. ইবনে ওমর থেকে হাদিস শ্রবণ করেননি এ কথার সাক্ষী ইমাম আবু দাউদও দিয়েছেন। তিনি বলেন-

كان ابن سيرين يرسل وجلساؤه يعلمون أنه لم يسمع، سمع من ابن عمر حديثين وأرسل عنه نحوًا من ثلاثين حديثًا.

ইবনে সীরীন ইরসাল (সনদবিচ্ছিন্ন হাদীস বর্ণনা) করতেন। তার সাথীরাও জানতো যে তিনি ইবনে ওমর থেকে কোনো কিছু শ্রবণ করেননি। হ্যাঁ, তিনি ইবনে ওমর রা. থেকে কেবল দুইটা হাদিস শ্রবণ করেছেন। বাকি ৩০টার মতো হাদিস তাঁর থেকে সনদবিচ্ছিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। [তাহযীবুল কামাল: ২৫/৩৪৬]

বর্ণনাটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দ্বিতীয় ও অন্যান্য কারণসমূহ

ইবনে ওমর রা. থেকে ইবনে সীরীন ছাড়া এই ঘটনা কেউ বর্ণনা করেনি। যদি এটি বাস্তব হত তাহলে অন্যান্য সূত্রেও বিষয়টি আসতো।

৩. ইবনে সীরীন থেকেও হাদীসটি সারী ইবনে ইয়াহিয়া ব্যতীত কেউ বর্ণনা করেনি। 

৪. এই বর্ণনার একজন রাবী হচ্ছেন, হাইসাম ইবনে খালফ। তার ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য-

والهيثم بن خلف ثقة لكنه يخطئ قليلًا... أنه كان لا يخالف ما في كتابه وأن علمه خطأ

হাইসাম ইবনে খালফ। তিনি সিকাহ, কিন্তু মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প ভুলও করতেন...। তার কিতাবে যা আছে তা নিয়ে মতবিরোধ না থাকলেও তার ইলমের ক্ষেত্রে কিছু ভুল ভ্রান্তিও রয়েছে [আত-তিবয়ান ফিত-তাখরীজ: ৭/১৩৮]

অতএব, সার্বিক বিবেচনায় বর্ণনাটি ভুল হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। আল্লাহই ভাল জানেন।

লুবাব হাসান সাফওয়ান 
 

৫টি মন্তব্য:

  1. সুন্দর! আমরাও সন্দেহ করেছিলাম যে হাদীসটিতে সমস্যা আছে। সর্বপরি আমার এক বন্ধু আমাকে জানিয়েছে হাদীসটিকে ইনকেতায়া আছে। তবে আল্লামা আইনী আরো দুই একজন মুহাদ্দিস হাদিস বর্ননা করে তাসফি করেছেন

    উত্তরমুছুন
  2. মাশাআল্লাহ অসাধারণ পোস্ট, জাযাকাল্লাহ।

    উত্তরমুছুন
  3. ইমাম ইবনে আব্দুল বার লিখেছেন - وَكُلُّ مَنْ عُرِفَ أَنَّهُ لَا يَأْخُذُ إِلَّا عَنْ ثِقَةٍ فَتَدْلِيسُهُ وَمُرْسَلُهُ مَقْبُولٌ فَمَرَاسِيلُ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ وَمُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ وَإِبْرَاهِيمَ النَّخَعِيِّ عِنْدَهُمْ صِحَاحٌ.

    => প্রত্যেক ঐ রাবী, যার সম্পর্কে এটা প্রসিদ্ধ যে, তিনি শুধু ছিক্বাহ রাবীদের থেকেই রেওয়ায়েত নেন, তার তাদলীস ও মুরসাল রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য। এজন্য সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রাহি.), ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন এবং ইবরাহীম নাখঈ রহঃ এর মুরসাল রেওয়ায়েত-সমূহ মুহাদ্দিছদের নিকট সহীহ। (আত-তামহীদ, ১/৩০)

    উত্তরমুছুন

mattjeacock থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.